ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতেই অবস্থান করছেন বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তবে তার যে পতন হবে সে বিষয়টি ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারেননি শেখ হাসিনা। অবশ্য তার পতনের বিষয়টা আগেই জানতে পেরে গিয়েছিল তার সবচেয়ে বড় বন্ধুদেশ ভারত। এমনটাই বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক বিশেষ সচিব (জন-কূটনীতি) পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কূটনীতিবিষয়ক সম্পাদক শুভজিৎ রয়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিনাক রঞ্জন শেখ হাসিনার পতনের আগে ও পরের ঘটনার মূল্যায়ন করেছেন। যিনি ২০০৭-০৯ সময়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে। যে কারণে ঢাকার ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে ১/১১ সময়ের পরিচিত মুখ ছিলেন।
পিনাক রঞ্জনকে প্রশ্ন করা হয়, ৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশে যা ঘটছিল ভারত কি তা জানতো? এর উত্তরে ঢাকায় ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “অবশ্যই আমরা জানতাম। তবে প্রশ্ন হচ্ছে হাসিনা তার পতন হবে সেটা ধারণাও করতে পেরেছিলেন কিনা।”
পিনাক রঞ্জন বলেন, “আমার মনে হয়, তিনি (হাসিনা) ধারণা করেননি। আসলে যদি আপনি ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকেন, তখন তো মনেই হবে যে সব ঠিকঠাক আছে।”
সাক্ষাৎকারে সাবেক রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “সুপ্রিমকোর্ট কোটার অনুপাত ৭ শতাংশ করার পরে বিক্ষোভ প্রশমিত হবে বলে মনে করেছিলাম। এসব বিক্ষোভ চলাকালে ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়। বিক্ষোভকারীরা তখন ৯ দফা দাবি নিয়ে ফিরে আসে। তারা কয়েকজন মন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবি করে। যদিও কেন তারা এসব (দাবি) করেছে, তা একটি রহস্য।”
শেখ হাসিনার মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবি বিষয়ে পিনাজ রঞ্জন বলেন, “হাসিনা অবশ্যই তার মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে রাজি হননি। তখন তারা আবারো তাণ্ডব শুরু করে। এইবার অত্যন্ত কার্যকর শক্তি তাদের সমর্থন দেয়।” পিনাক বলেন, “আমার ধারণা এখানে অন্যান্য প্রভাবগুলো কাজ করেছে— যার বেশিরভাগ বিদেশি এবং কিছু ছিল অভ্যন্তরীণ।”
কোটা থেকে রূপ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এতটাই রাজনৈতিক রূপ নিয়েছিল যে, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এক দফা দাবি উঠে গিয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিনাক রঞ্জন বলেন, “এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমি বলব, সেনাবাহিনী তাকে রক্ষা করতে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তারা (হাসিনাকে) জানিয়ে দেয়, আমরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করব না।”
