দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই হতাশ বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। কারণ, গত ১৫ বছরে তার সব পরিশ্রম প্রায় বিফলে যাচ্ছে।
প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমস ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন।
টাইম ম্যাগাজিনকে জয় বলেন, “তিনি (হাসিনা) দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খুবই হতাশ। কারণ গত ১৫ বছরে তার সব পরিশ্রম প্রায় বিফলে যাচ্ছে।” শেখ হাসিনার ছেলে জয় আরও বলেছেন, “হাসিনা নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য দেশে ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
টাইমস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মা এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি বার্তা পাঠান জয়। তবে জয়ের মা যে সমস্যায় পড়েছিলেন, সেটি সাধারণ কোনো সমস্যা ছিল না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এই অস্থিরতার পেছনে কারণ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করা।
টাইমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জয় বলেন, “আমরা সবাই-ই কোটা আন্দোলন দেখে অবাক হয়েছিলাম। আসলে আমি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বলেছিলাম, ৩০ শতাংশ কোটা বেশি হয়ে যায়; আমাদের এটি কমিয়ে ৫ শতাংশে নিয়ে আসা উচিত। তখন একজন মন্তব্য করেন, ‘আমরাও মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি’। আমি মজা করে বলেছিলাম, এজন্যই তো আমি ৫ শতাংশ রাখতে বলেছি!”
শেষ পর্যন্ত কোটা ইস্যু অগ্নিশিখার মতো বৈষম্য ও রাজনৈতিক দমনপীড়নের প্রতি বাংলাদেশের জনসাধারণের ক্ষোভকে উসকে দেয়। জুলাই মাসে এই অস্থিরতা তীব্র আকার ধারণ করে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের সহিংসভাবে দমন-পীড়নের ফলে অন্তত ১ হাজার মানুষ মারা যান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “হাসিনাকে শেষবারের মতো যখন দেখা যায়, তখন তাকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ওঠানো হচ্ছিল। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা তার সরকারি বাসভবনের দখল নিয়েছিলেন। হাসিনা সেই পরিস্থিতিতে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখন পর্যন্ত ভারতেই অবস্থান করছেন এবং জনসম্মুখের আড়ালে থেকে নিজের ক্ষত সারানোর চেষ্টা করছেন।”
প্রতিবেদনে উঠে আসে, বাংলাদেশে এখন একটি বড় ধরনের হিসাব-নিকাশ চলছে। ১৫ বছরের অপ্রতিরোধ্য শাসনের সময় হাসিনার দল আওয়ামী লীগ প্রত্যেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর ফলে সেনাবাহিনী, আদালত, জনসেবা ও বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি গভীর অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে মানুষের মনে।
১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়েছে ছাত্রনেতা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর, যারা হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
হাসিনার শাসনামলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শতাধিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হয়েছে। মামলাগুলো এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা অনুষ্ঠিত হতে অন্তত ১৮ মাস সময় লাগতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানসহ একটি ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। গত ২৬ আগস্ট এক টেলিভিশন ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, “দুর্নীতি, লুটপাট এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি দায়বদ্ধ রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই এই সংস্কারের উদ্দেশ্যে। এখন যদি আমরা এখন সুযোগ হারাই, আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হব।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর কয়েক সপ্তাহ রাজনীতি ও নিরাপত্তাশূন্যতা তৈরি হয়েছিল। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আওয়ামী লীগের লোকজনদের সরানো হয়েছে, অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজারো পুলিশ সদস্য আত্মগোপনে চলে গেছেন, যাতে জনরোষের শিকার না হন (অন্তত ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন)।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী খালেদা জিয়া গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দেশের প্রধান ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে হাসিনার পতনের উচ্ছ্বাস এখন দেশ কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে মতবিরোধে রূপ নিয়েছে।