ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি বলেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন ‘তালেবানের মতো’ আরেকটি রাষ্ট্র হবে। শুধু তা-ই নয়, দেশটি ইরানের ‘ক্লায়েন্ট স্টেট’ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম আরবিবিকে সাক্ষাৎকার দেন রুশদি। এ সময় তিনি বলেন, ‘গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা দেখে যেকোনো মানুষেরই বিচলিত হওয়ার কথা। তবে আমি চাই কিছু বিক্ষোভকারী হামাসের কথাও উল্লেখ করুক। তাদের কারণেই এসব শুরু হয়েছে। হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তরুণ বা প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি যারা করেন তাদের এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন করা অদ্ভুত ঠেকে।’
‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ খ্যাত লেখক বলেন, ‘তারা স্বাধীন ফিলিস্তিনের কথা বলে। আমি এমন একজন ব্যক্তি যিনি জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছি; সম্ভবত আশির দশক থেকে। এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকলে এটি হামাস দ্বারা পরিচালিত হতো। তারা এটিকে তালেবানের মতো রাষ্ট্রে পরিণত করত। আর এটা হতো ইরানের ক্লায়েন্ট স্টেট।’
রুশদির সাক্ষাৎকারের একটি ক্লিপ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন সম্পর্কে তার মন্তব্য ইসরায়েলের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি কূটনীতিক ডেভিড সারাঙ্গা ক্লিপ ও মন্তব্যটি শেয়ার করেছেন।
সাক্ষাৎকারে রুশদি প্রশ্ন তোলেন, পশ্চিমা বামপন্থীদের প্রগতিশীল আন্দোলন কি আরেকটি তালিবান রাষ্ট্র বানাতে চায়? ইসরায়েলের পাশে ঠিক ইরানের মতো আরেকটি রাষ্ট্র? তার মতে গাজায় মৃত্যুর ঘটনায় যে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে তা একেবারেই সঠিক, কিন্তু যখন এটি ইহুদিবিদ্বেষ এবং কখনো কখনো হামাসের সমর্থনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন এটি সমস্যা সৃষ্টি করে।
১৯৮৮ সালে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসটি প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করার অভিযোগ ওঠে। এর এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসাবে তিন মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
রুশদি বর্তমানে তার নতুন বই ‘নাইফ’-এর প্রচারের কাজে জার্মানিতে রয়েছেন। বইটির নাম ২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি মঞ্চে তার ওপর হওয়া ছুরি হামলার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেদিন একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার।
নিউ জার্সির বাসিন্দা হাদি সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি। সে সময় তালেবানরা টুইটারে (বর্তমানে এক্স) এই হামলার প্রশংসা করে।