রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে একটি অংশের দখল নিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। গত ৬ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনী তীব্র আক্রমণ চালিয়ে অঞ্চলটি দখলে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার ভূখণ্ডে এটাই বিদেশি কোনো বাহিনীর সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।
তবে এমন ভয়াবহ হামলার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, “রাশিয়া এর সমুচিত জবাব দেবে”। একই সঙ্গে পুতিন এটাও বলেছেন, “পশ্চিমা দেশগুলো আগুন নিয়ে খেলছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তা শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ থাকবে না”।
মূলত, ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “বিশ্বের বৃহৎ পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো জড়িয়ে পড়লে এ যুদ্ধ আরও বড় আকার নেওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তবে তিনি এটাও বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ জড়াতে চায় না রাশিয়া”।
মঙ্গলবার মস্কোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, “আমরা আরও একবার নিশ্চিত করে বলছি, ছোট শিশুরা যেভাবে দেশলাই বাক্স নিয়ে খেলে, সেভাবে আগুন নিয়ে খেলা প্রাপ্তবয়স্ক চাচা-খালাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক”।
সের্গেই লাভরভ আরও বলেন, “আমেরিকানরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ–সংক্রান্ত যেকোনো আলাপকে বিতর্কিতভাবে ইউরোপের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে দেখে। অর্থাৎ তারা ভাবে, ঈশ্বর না করুন, এটা যদি ঘটে, কেবল ইউরোপই তার ফল ভোগ করবে”।
রাশিয়া তার পারমাণবিক নীতি (ডকট্রিন) আগেই পরিষ্কার করেছে বলেও জানান লাভরভ। বলেন, “প্রেসিডেন্ট কখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববেন, সে বিষয়ে রাশিয়ার ২০২০ সালের পারমাণবিক নীতিতে স্পষ্ট করে বলা আছে। মোটাদাগে, যখন দেশটি পারমাণবিক অথবা গণবিধ্বংসী অস্ত্রে হামলার শিকার হবে, যখন দেশটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
বিদেশ থেকে পাওয়া অস্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য পশ্চিমাদের কিয়েভের অনুরোধ বিবেচনায় নেওয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার মতে, এটা করে তারা যুদ্ধের ব্যাপকতা আরও বাড়াতে চাইছে এবং ‘বিপদ ঘাড়ে তুলে নিচ্ছে’।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে হামলা দেখিয়ে দিয়েছে, ক্রেমলিনের প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি আদতে ভাঁওতা। মিত্রদের দ্বারা আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে রাশিয়ার কিছু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে পারছে না বলেও জানান জেলেনস্কি।
তবে ওয়াশিংটন থেকে বলা হয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের আকস্মিক অভিযানের পরিকল্পনার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। এই অভিযানের সঙ্গে তারা কোনোভাবে জড়িত না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবি মানতে নারাজ রাশিয়া। তবে সের্গেই রিয়াবকভ জোর দিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই জড়িত’। সূত্র: প্রথম আলো।