রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ সশস্ত্র বিদ্রোহ করার চেষ্টা করছে এমন আশঙ্কায় মস্কোসহ অনেক শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিরর ও বিবিসি পৃথক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ সশস্ত্র বিদ্রোহ করার চেষ্টা করছে এমন আশঙ্কায় মস্কোসহ রাশিয়ার অনেক শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রোস্তভ শহরের গভর্নর নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার প্রিগোঝিন তার দলের সৈন্যদের উপর এক মারাত্মক মিসাইল হামলার অভিযোগ করেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রিগোঝিন এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি তবে যারা এই হামলা করেছে তাদের শাস্তি দেওয়ার শপথ নেন তিনি। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, এই মিসাইল হামলার কথা অস্বীকার করে এবং প্রিগোঝিনকে সবরকম ‘অবৈধ কার্যক্রম’ বন্ধের আহবান জানায়।
অন্যদিকে প্রিগোঝিন ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি যে কোনো মূল্য রাশিয়ান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের পতন ঘটাবেন। এরই মধ্যে তিনি ইউক্রেন থেকে সীমান্তের লাগোয়াবর্তী রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছেন এবং একটা রাশিয়ান হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছেন বলে দাবি করছেন।
অন্যদিকে রাশিয়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং মস্কোর রাস্তায় সামরিক ট্রাকের দেখা মিলছে। রাস্তায় রাস্তায় ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধে লিপ্ত ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ। এর নেতা ৬২ বছর বয়সী ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন বিভিন্ন সময় যুদ্ধের কৌশল নিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর নেতৃ্ত্বের সমালোচনা করে আসছেন।
তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ এনেছে ক্রেমলিন। যদিও সামরিক অভ্যুত্থানের কথা অস্বীকার করেছেন ওয়াগনার দলনেতা।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন বলেন, তার সৈন্যরা যখন সীমান্ত অতিক্রম করে, তখন সেখানে উপস্থিত সৈন্যরা তাদের আলিঙ্গন করে। তারা ইউক্রেন সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রোস্তভে প্রবেশ করছেন। যদি কেউ আমাদের পথে আসে তবে আমরা আমাদের পথে আসা সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দেব... আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে রাশিয়ার জনগণকেও তার সঙ্গে থাকার আহবান জানান তিনি।
রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিনকে রক্ষার জন্য রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের প্রবেশ ও প্রস্থান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং রাজধানীর কিছু এলাকায় সামরিক যানবাহন মোতায়েন করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রিগোঝিন বলছেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ভেতর যে ‘শয়তান’ আছে তাদের থামাতে হবে এবং তিনি ‘ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই’-এর ঘোষণা দিয়েছেন।
এমফোর হাইওয়ে লিপেতস্ক ও ভরোনেঝ অঞ্চলের সীমান্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিপেতস্কের গভর্ণর। এমফোর মস্কোর সঙ্গে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ ঘটায় এবং একই সঙ্গে রোস্তভ অঞ্চল ও এর প্রধান শহর রোস্তফ-অন-ডনেও যাবার রাস্তা এটি।
মস্কোর মেয়র জানিয়েছেন রাজধানীতে সন্ত্রাস-দমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে।