সব ইসরায়েলি পণবন্দীদের তখনই ছাড়া হবে, যখন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী সব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ কথা বলেছেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের এক নেতা।
কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার লাইভে এমন তথ্য জানান হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য গাজী হামাদ।
ওই লাইভে গাজী হামাদ বলেন, হামাস ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী সব ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিলেই ইসরায়েলি পণবন্দীদের নমুক্তি দেব। বিষটি নিয়ে খুব শিগগির আমরা আলোচনায় বসবো। এরপর মিডিয়াকে জানানো হবে।
যখন হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চলছে তখনই হামাসের এই নেতা এমন তথ্য জানালেন।
এদিকে, ইসরায়েল ফিলিস্তিন সঙ্কট নিয়ে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদন সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আহ্বানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু করার উপযুক্ত সময় বলে উল্লেখ করা হয়।
আলজাজিরার সাংবাদিক জেমস বেসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন- অ্যালন লিয়েল, ফিলিস বেনিস ও মুস্তাফা বারঘৌতি। তারা পুরনো দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে যোগ দিয়েছিলেন।
যা ছিল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে
ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল পৃথক দুটি রাষ্ট্রের ধারণা প্রথমবারের মতো বাস্তবতার দিকে এগোতে শুরু করে ১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। যেটা অসলো অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি।
এই চুক্তিতে পশ্চিম তীর এবং গাজায় সরকার পরিচালনার জন্য একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়। এটা গঠনের সময়সীমা ছিলো পাঁচ বছর।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা স্বীকার করে নেয় ইসরাইল রাষ্ট্রকে।
চুক্তি অনুযায়ী অবশ্য খুব দ্রুতই পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি কর্তৃপক্ষও গঠন করা হয়।
কিন্তু তারপরই শান্তি প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। নানারকম বাধা তৈরি হয়।
যে কারণে স্থবির শান্তি প্রক্রিয়া
অসলোতে দুই রাষ্ট্র সমাধান মেনে নেয়া হলেও সেই রাষ্ট্র কবে গঠন হবে তার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
এমনকি ইসরাইলের বাইরে আলাদা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয়েরও কোনো সমাধান করা হয়নি।
এই চারটি বিষয় হচ্ছে, প্রথমত- দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত কোথায়, কিভাবে নির্ধারণ হবে সেটা।
দ্বিতীয়ত- জেরুসালেম কার অধীনে থাকবে। তৃতীয়ত- ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারীদের কিভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে।
এবং চতুর্থত- ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে ইসরাইলের ভেতরে থাকা যেসব ফিলিস্তিনি বাস্তচ্যুত হয়েছেন, তারা ইসরাইলে কিভাবে ফিরবেন।
চুক্তিতে বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এগুলো আলোচনার ভিত্তিতে পরে ঠিক করা হবে। কিন্তু সেটা আর কখনোই হয়নি।
এদিকে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ১৩ ইসরাইলি ও ৩৯ ফিলিস্তিনির মুক্তির পর শনিবার ১৪ ইসরাইলির মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ৪২ ফিলিস্তিনির মুক্তি দেয় ইসরাইল।
জানা গেছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৪ হাজার ৮৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি শিশু এবং নারী। আহত হয়েছে ২৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ।
গত ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় অবিরত বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে হাসপাতাল, মসজিদ এবং গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, তাদের ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়।
সূত্র- আলজাজিরা