মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হতেই ট্রাম্প-বিরোধী নারীরা রাজপথে আন্দোলনে নামেন। একাধিক শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্ল্যাকার্ড হাতে তাদের দেখা গেছে। যেসব প্লাকার্ডে লেখা, “আমার শরীর, আমার পছন্দ (মাই বডি, মাই চয়েস)”।
আন্দোলনকারী নারীদের অভিযোগ, এ বারের নির্বাচনে ট্রাম্পকে উপচে পড়া সমর্থন জানিয়েছেন পুরুষেরা। যার জেরে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজধানীর হোয়াইট হাউজ দখল করেছেন ট্রাম্প। যে কারণে গোটা পুরুষ জাতির ওপর ‘প্রতিশোধ’ নিতেই ফোরবি আন্দোলন শুরু করেছেন ট্রাম্প-বিদ্বেষী আমেরিকান প্রমীলারা।
আন্দোলনকারীরা শুধু ট্রাম্পকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি, মারাত্মক এক ঘোষণাও দিয়েছেন। আগামী দিনে তারা সমাজের স্পর্শকাতর সম্পর্ক যেমন প্রেম, বিয়ে, শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তানের জন্ম দেওয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী নারী ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন। যেসব ভিডিওতে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার খবরে তারা হাউহাউ করে কান্না শুরু করেছেন। প্রবলরকম নারী-বিদ্বেষী ট্রাম্পের বিজয়কে তারা মেনেই নিতে পারছেন না।
মূলত এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক নেত্রী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ট্রাম্পকে বার বার তিনি নারী-বিদ্বেষী বলে উল্লেখ করেছিলেন। ট্রাম্পও তার নির্বাচনী প্রচারণায় সে রকম ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিলেন। ফলে কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পরই ট্রাম্প-বিদ্বেষী মার্কিন নারীরা ফোরবি আন্দোলন শুরু করেন।
মূলত, ফোরবি আন্দোলনের জন্ম হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ফোর, অর্থাৎ চার সংখ্যা থেকে এই কথাটি এসেছে। কোরিয়ান ভাষায় বি শব্দটির অর্থ হলো নম্বর। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটির ধাঁচেই আমেরিকান নারীরা এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার হ্রাসের নেপথ্যে ফোরবি আন্দোলনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের পিএইচডি ছাত্রী মীরা চোই বলেছেন, “রাষ্ট্র, সরকার এবং পুরুষেরা কীভাবে দিনের পর দিন শোষণ করে এসেছে, তা নিয়ে এ বার নারী সমাজ ভাবতে শুরু করেছে।”
বিশ্লেষকদের অনুমান, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প-বিদ্বেষী নারী সমাজ হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় এলে প্রজননের অধিকার রক্ষা পাবে বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় আন্দোলনের রাস্তা বেছে নেন ওই প্রমীলারা।
অন্যদিকে আমেরিকায় ফোরবি আন্দোলন শুরু হতে না হতেই ইন্টারনেটে এর তথ্যানুসন্ধান হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) আন্দোলনরত এক নারী লিখেছেন, “পুরুষকেন্দ্রিক দুনিয়ায় নারীদের কোনো স্থান নেই। আমরা ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত। আর তাই আমরা প্রজনন ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করতে চাই। এটা একটা নারীমুক্তির আন্দোলন।”
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা