প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের বেইজিং সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদমাধ্যম। এসব প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে গভীর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) দেশগুলোর মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও পারস্পরিক উপকারী অংশীদারত্বের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
সফরের শেষ দিনে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে শেখ হাসিনার সঙ্গে সি জিন পিং-এর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে চীনের আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চীনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে একটি ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত করেছে। খবর প্রথম আলোর।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী বছরকে সামনে রেখে দুই দেশকে সংস্কৃতি, পর্যটন, সংবাদমাধ্যম ও খেলাধুলার মতো খাতে বিনিময় এবং সহযোগিতা বাড়াতে চেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন সি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে চীন প্রস্তুত বলেও জানান সি।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সংবাদপত্র পিপলস ডেইলির ওয়েবসাইটে হাসিনা-সির বৈঠক নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া থেকে নেওয়া প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘সি বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সিসিপির আরেক মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস শেখ হাসিনা ও সির বৈঠক নিয়ে ‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নত ও বিস্তৃত হয়েছে’ শিরোনামে সিজিটিএনের মতো সির বক্তব্যের বিষয় উল্লেখ করেই মন্তব্যধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ এক–চীন নীতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলে, তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের অবস্থানকে সমর্থন করে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে এবং চীনের নিজের মূল স্বার্থ রক্ষার কাজকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।”
প্রতিবেদনে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেংয়ের মন্তব্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর দুই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বেইজিং সফরকে ভারত কীভাবে দেখছে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হাসিনার চীন সফরকে “প্রধান দুই খেলোয়াড়কে খুশি রাখার ভারসাম্যপূর্ণ কাজ” হিসেবে দেখে। তারা মনে করে, শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে দরকার, আর অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য দরকার চীনকে।’
তবে বিশেষজ্ঞ কিয়ান প্রতিবেদনে বলেছেন, ভারতের চাপের মুখে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ঢাকাকে নিজের কূটনৈতিক স্বাধীনতা ও উন্নয়নের সুযোগ আরও ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
হংকংভিত্তিক ব্যক্তিমালিকানাধীন গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে (এসসিএমপি) ‘চীন ও বাংলাদেশ বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চীনের ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের আগে চীনের কাছে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়। এসসিএমপির প্রতিবেদেন বলা হয়, বাংলাদেশের এই ঋণের অনুরোধের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চীনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।