ছত্রপতি শিবাজী (১৬৩০-১৬৮০) ১৭শ শতকের একজন শাসক। মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেই সময়েই সাহসী রাজা ও নায়ক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। তাকে গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু আইকন হিসেবে সম্মান করা হয়। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র রাজ্যে শিবাজীর ৩৫ ফুট উঁচু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল। নির্মাণ খরচ ছিল ২৩.৬ মিলিয়ন রুপি।
তবে গত ২৬ আগস্ট সিন্দুদুর্গ জেলায় ভারী বর্ষণের কারণে ঐতিহাসিক সেই ভাস্কর্য ভেঙে পড়ে। এতে রাজ্যে বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ভাস্কর্য ভেঙে পড়ার ঘটনা রাজ্যের শাসক জোটকে সংকটে ফেলেছে। বিরোধী দলগুলো শক্তিশালী এক ইস্যু লাভ করেছে।
তবে গেল ডিসেম্বরে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার দল বিজেপি মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের অংশ। শিব সেনা এবং ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) বিভক্ত অংশের সঙ্গে মিলে বিজেপি একটি জোটের মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকার চালায়।
তাই ভাস্কর্য ভাঙার পরপরই গত ৩০ আগস্ট মোদি এ ঘটনায় ক্ষমা চান। সে সময় মোদি বলেন, “আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই যারা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে তাদের পূজিত দেবতা হিসেবে সম্মান করেন। আমি জানি তাদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি আশীষ শেলারও জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বলেছেন, “ভুলটি সংশোধন করা হবে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। পুলিশ একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি প্রকল্পের কাঠামোগত পরামর্শদাতা ছিলেন। ভাস্করকে খোঁজার চেষ্টা করছে।”
তবে ইতোমধ্যে বিরোধীরা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তারা ভাস্কর্যটির নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। বিরোধী নেতা শরদ পাওয়ার এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলেছেন, “রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিবাজী ভাস্কর্য এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শুধু নতুনভাবে স্থাপন করা ভাস্কর্যটি ধসে পড়েছে।” তিনি বলেন, “ভাস্কর্যটি স্থাপন করার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করা হয়েছে। এটি ছত্রপতি মহারাজের প্রতি অপমান।”
মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “ভাস্কর্যটি উপকূলীয় শহরে প্রবল বাতাসের কারণে ভেঙে পড়েছে।” রাজ্যমন্ত্রী রবীন্দ্র চৌহান বলেছেন, “গণপূর্ত বিভাগ (তিনি এর প্রধান) ইতোমধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীকে (যারা ভাস্কর্যটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল) জানিয়েছিল, ভাস্কর্যটি নাট-বল্টুতে জং ধরা পড়েছিল।”
তথ্যমতে, শিবাজীকে ১৬৭৪ সালে রাজকোট দুর্গে ছত্রপতি (সংস্কৃতে রাজা) খেতাবে ভূষিত করা হয়েছিল। আর সেখানেই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। তিনি পশ্চিম, কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশ নিয়ে মারাঠা রাজ্য শাসন করেছিলেন। তাকে একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে দেখা হয়, যিনি তার সময়ের শাসক শক্তির সঙ্গে সফলভাবে জোট তৈরি করেছেন বা সামরিকভাবে প্রতিরোধ করেছেন।
শিবাজী বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন এবং কোনো রাজনৈতিক দল তাকে অবজ্ঞা করতে বা অপমানের অভিযোগ থেকে বাঁচতে পারে না। শিবাজীর জাতের মারাঠারা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রাধান্য বিস্তার করেছে– রাজ্য গঠনের পর ২০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনই মারাঠা ছিলেন।
রাজনীতিবিদরা মারাঠা সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করতে চান না, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা দাবি করে বারবার প্রতিবাদ করেছে। বিরোধীরা আশা করছে, তারা এই বিষয়টিকে রাজ্য ও মারাঠা গর্বের অপমান হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে। মহা বিকাশ আঘাদি (এমভিএ) নামক বিরোধী জোট রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ আয়োজন করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি পাল্টা প্রতিবাদ করেছে। সূত্র: বিবিসি