• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোলেক্স ঘড়ির খোঁজে পেরুর প্রেসিডেন্টের বাসায় পুলিশ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪, ০৮:২৭ এএম
রোলেক্স ঘড়ির খোঁজে পেরুর প্রেসিডেন্টের বাসায় পুলিশ

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তের হাতে দেখা যায় দামি ঘড়ি। এই ঘড়ি এতটাই দামি যে তার বেতন–ভাতা বা আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই এই অপ্রকাশিত সম্পদ বা বিলাসবহুল ঘড়ির পেছনে সম্ভাব্য দুর্নীতি তদন্তের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের নথির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (৩০ মার্চ) ভোরে প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা রোলেক্স ঘড়ির সন্ধানে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে অভিযান চালায়। প্রেসিডেন্ট বোলুয়ার্তে এই সম্পদের ঘোষণা দেননি।

পুলিশ এবং প্রসিকিউটর অফিসের যৌথ অভিযান স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল লাতিনায় সম্প্রচার করা হয়। বার্তা সংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে তদন্তকারী দলের এজেন্টদের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে একটি স্লেজহ্যামার নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা রাজধানী লিমার সুরকিলো জেলায় প্রেসিডেন্টের বাসভবন ঘেরাও করার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় প্রেসিডেন্টকে অবশ্য বাসভবনে দেখা যায়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের অনুরোধে বিচার বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত অভিযান সম্পর্কে পুলিশ বলেছে, “তল্লাশি ও জব্দ করার উদ্দেশ্যেই অভিযান চালানো হয়েছে।”

এ বিষয়ে এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রেসিডেন্ট বলেন, “বাসভবনের কর্মীরা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেছেন। এটি স্বাভাবিক, কোনো ঘটনা ছাড়াই এটি শেষ হয়েছে।”

পেরুর প্রধানমন্ত্রী গুস্তাভো আদ্রিয়ানজেন এই অভিযানের সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্স হ্যান্ডলে বলেছেন, “যে রাজনৈতিক গোলমাল তৈরি করা হচ্ছে, এটি গুরুতর ব্যাপার। এতে বিনিয়োগ এবং সমগ্র দেশ প্রভাবিত হচ্ছে। গত কয়েক ঘণ্টায় যা কিছু ঘটেছে তা বাড়াবাড়ি এবং অসাংবিধানিক।”

আদ্রিয়ানজেন বলেন, প্রেসিডেন্টের সরকারি প্রাসাদের ভেতরে তাঁর বাসভবনেই ছিলেন। তলব করা হলে তিনি প্রসিকিউটরের অফিসে গিয়ে বিবৃতি দেবেন। প্রধানমন্ত্রী রেডিও স্টেশন আরপিপিকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বা প্রেসিডেন্ট বোলুয়ার্তের পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই নেই!

স্থানীয় নিউজ আউটলেট লা এনসাররোনাতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট বোলুয়ার্তের সম্পদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টকে রোলেক্স ঘড়ি পরতে দেখা গেছে।

সরকারি বেতনে কীভাবে এত ব্যয়বহুল ঘড়ি পরতে পারেন সে প্রশ্নের জবাবে, প্রেসিডেন্ট সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছিলেন, ১৮ বছর বয়স থেকে কঠোর পরিশ্রমের ফল এটি। শোনা যায়, ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ঘাঁটাঘাঁটি না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট।

আল জাজিরার সাংবাদিক মারিয়ানা সানচেজ লিমা থেকে জানান, বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, প্রেসিডেন্টের ওই ঘড়ির দাম প্রায় ৫ লাখ মার্কিন ডলার।

মারিয়ানা সানচেজ বলেন, প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে বোলুয়ার্তে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। সেখানে তাঁর মাসিক বেতন ছিল ১ হাজার ডলার। আর এখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ডলার ভাতা পান। ফলে অনেকে বলছেন, প্রেসিডেন্ট এই ঘড়ি কেনার সামর্থ্য রাখেন না।

এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হুয়ান ভিলেনা এই সপ্তাহে বোলুয়ার্তের আদালতে উপস্থিতি দুই সপ্তাহ বিলম্বিত করার আবেদনের বিরোধিতা করেছেন। তদন্তে সহযোগিতা করা এবং ঘড়ি কেনার প্রমাণপত্র সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে তারা বোলুয়ার্তের গত দুই বছরের সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করবে।

বোলুয়ার্তে (৬১) সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কার হাতে সরকারি প্রাসাদে প্রবেশ করেছি এবং আমি পরিষ্কার হাতে এখান থেকে বের হবো।’

বোলুয়ার্তে ২০২১ সালের জুলাইয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলো কংগ্রেস ভেঙে দেওয়া এবং ডিক্রি জারি করার চেষ্টা করলে ক্ষমতাচ্যুত এবং গ্রেপ্তার হন, এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বোলুয়ার্তে।

ওই ঘটনার পরের বিক্ষোভে অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছে।

সমালোচকেরা বলেন, বোলুয়ার্তের সরকার ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে। কারণ এ সরকার আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করেছে এবং পেরুর বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন আইন পাসের চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!