জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিম্ন আয়ের দেশ ছাড়াও আফ্রিকার কিছু অংশে ঢুকে পড়বে বিষধর সব সাপ। সেসব সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা সমীক্ষায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নতুন অঞ্চল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে অনেক বেশি সংখ্যক বিষধর সাপের স্থানান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গবেষকেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সাপের প্রজাতিগুলো নেপাল, নাইজার, নামিবিয়া, চীন ও মিয়ানমারে ঢুকে পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ১৮ থেকে ২৭ লাখ মানুষ বিষধর সাপের কামড় খায়। এর ফলে মৃত্যু হয় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষে। আর অঙ্গচ্ছেদের কারণে স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে অন্তত ৪ লাখ মানুষ।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে বেশির ভাগ বিষধর সাপের প্রজাতির বাসস্থানের পরিধি সংকুচিত হলেও পশ্চিম আফ্রিকান গ্যাবুন ভাইপারের মতো কিছু প্রজাতির আবাসস্থল ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ইউরোপীয় এএসপি ভাইপার এবং শিংযুক্ত ভাইপারের পরিসরও ২০৭০ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হবে।
গবেষণায় ২০৯টি বিষাক্ত সাপের প্রজাতির ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয়েছে যে, বিভিন্ন সাপের প্রজাতি ২০৭০ সালের মধ্যে কোথায় কোথায় জলবায়ুগত অনুকূল পরিবেশ খুঁজে পেতে পারে। তবে আফ্রিকার বুশ ভাইপার এবং আমেরিকার হগনোসড পিট ভাইপারসহ বেশ কিছু প্রজাতির সাপ তাদের সীমানার ৭০ শতাংশেরও বেশি হারাতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সার্জিপের অধ্যাপক পাবলো এরিয়েল মার্টিনেজ এবং জার্মানির লাইপজিগে জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ বায়োডাইভারসিটির গবেষক তালিতা এফ আমাদো বলেছেন, জনসংখ্যার চাপে বেশি খাদ্যশস্য ফলাতে গিয়ে এখন অনেক বেশি সংখ্যক জমি কৃষিকাজ ও পশুপালনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। যাতে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হচ্ছে সাপের প্রাকৃতিক আবাসস্থল।
মার্টিনেজ ও আমাদো বলেন, “কিছু বিষধর সাপের প্রজাতি পরিবর্তিত ফসলি জমির সঙ্গেও খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিছু কিছু ফসলের খেত বা গবাদিপশুর চারণভূমিতেও ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। কেননা, এসব ভূমিতে ইঁদুরের মতো খাদ্যের উৎস পাওয়া যায়।”
গবেষকরা বলছেন, “আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে যে, বিষাক্ত সাপ যখন বাসস্থানের জন্য নতুন এলাকা খোঁজা শুরু করে তখন আমরা নিজেদের এবং আমাদের পরিবেশকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারি।”
ডব্লিউএইচওর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অবহেলিত রোগ বিষয়ক গ্রুপের গবেষণা বিজ্ঞানী আনা পিন্টর বলেছেন, “উদ্বেগজনক বিষয়টি হচ্ছে—তীব্র গরম, আর্দ্র আবহাওয়া এবং বন্যা সাপকে স্থানচ্যুত করলে সাপের কামড়ে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অনেক বেশি বাড়বে।”
সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন লেকচারার সৌম্যদীপ ভৌমিক বলেন, “সাপের কামড়ের উচ্চ ঝুঁকির ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশগুলোর পরস্পরকে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক সীমানা মানুষের জন্য, সাপের জন্য নয়।”