কানায় কানায় ভর্তি পার্লামেন্ট। শত শত সাধারণ মানুষ বসেছিলেন গ্যালারিতে। যারা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে নির্যাতন আর বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তারা আশ্রয়হীন হয়ে কিংবা মানসিকভাবে সহায়তা চেয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। তাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল। তারা অপেক্ষা করছেন সরকারের পক্ষ থেকে কী বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীই বা কী বলেন, তা শোনার জন্য।
এর আগে নির্যাতিত এসব মানুষের অভিযোগ নিয়ে সরকার কমিশন গঠন করেছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অত্যাচার বা হেনস্থার শিকার হয়েছেন।
বিগত ১৯৫০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন নিয়ে তদন্ত করে৩৪ কমিশন। তদন্তে বলা হয়েছে, অন্তত ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ অত্যাচার ও হেনস্থার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অসংখ্য শিশু রয়েছে। তাদের ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার হয়েছে।
বহু শিশু সরাসরি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, সরকারি এবং চার্চের প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটার ফলে তারা সরাসরি অভিযোগ জানাতেও পারেনি সব সময়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বহু শিশুকে সম্পূর্ণ অকারণে তাদের মায়েদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে জোর করে। শিশুদের অন্য লোকের কাছে দত্তক হিসেবে পাঠানো হয়েছে। শিশু এবং নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত বর্ণবাদের কারণেই এই অত্যাচার চালানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন মাওরি জনগোষ্ঠীর মানুষ।
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্যের ওপর আলোচনা হয় পার্লামেন্টে। প্রতিবেদনে উঠে আসা ভয়াবহতার জন্য ক্ষমা চান প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুকসন। তিনি নিজের ও সাবেক সরকারের তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ক্রিস্টোফার বলেন, এমন ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে, সে দিকে নজর দেওয়া হবে। যে ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত হবে।
এমন চিত্র দেখা গেছে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে। জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জানান, কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষীদের চিহ্নিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর কখনো না ঘটে, তার ব্যবস্থা করা হবে।
পার্লামেন্টের গ্যালারিতে যারা বসেছিলেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন নির্যাতিত। তাদের অধিকাংশই নিউজিল্যান্ডের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।