রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এক বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালা শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলতে দেখা গিয়েছিল।
তখন শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ২০১৩ সালের ১৫ জুন সেই ছবি প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল। সে সময় লেবার পার্টির সংসদীয় প্রার্থী ছিলেন টিউলিপ। তখন পর্যন্ত সরকারি প্রতিনিধিদল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন। তবে অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তার পরিবারের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তি হয়। যেখানে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটা প্রায় এক দশক আগের। এর মধ্যে চলতি বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে।
সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ রেহানা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যার মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রয়েছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে ব্রিটেনের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে দুদকের এই অনুসন্ধান শুরুর ঘটনা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো। যেসব সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। আর সেই ঘটনার জের ধরেই প্রায় এক দশক আগের রুশ প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়িয়ে তোলা টিউলিপের হাস্যোজ্জ্বল ছবি নতুন করে উঠে এসেছে আলোচনায়।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের শিরোনামে টিউলিপ
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য ডেইলি মেইল’ শিরোনাম করেছে ‘কিয়ার স্টারমার’স করাপশন মিনিস্টার অ্যান্ড হার ফ্যামিলি আর প্রোবড ওভার ক্লেইমস দে টুক ৪ বিলিয়ন ইন ব্রাইবস ফর পুতিন-ফান্ডেড পাওয়ার প্ল্যান্ট।’ অর্থাৎ ‘পুতিনের অর্থায়নে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তদন্তের অধীন কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতি-বিষয়ক মন্ত্রী ও তার পরিবার।’
দ্য টেলিগ্রাফের শিরোনাম, ‘লেবার এমপি ফেসেস বিয়িং কট আপ ইন বাংলাদেশি এমবেজেলমেন্ট ইনভেস্টিগেশন।’ অর্থাৎ,‘বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে ধরা পড়তে পারেন লেবার এমপি।’ বিবিসির শিরোনাম, ‘মিনিস্টার নেমড ইন বাংলাদেশ করাপশন প্রোব’। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে মন্ত্রীর নাম এসেছে।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটেনের আর্থিক খাতে দুর্নীতিরোধের দায়িত্ব সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের কাঁধে। তবে ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিতে তিনি মধ্যস্থতা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের তদন্তেও তার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিবিসি-সহ অন্যান্য ব্রিটিশ গণমাধ্যম তার মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করলেও তিনি তাতে এখন পর্যন্ত সাড়া দেননি।