পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তি ও দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করছে পিটিআই অধিভুক্ত ইনসাফ স্টুডেন্টস ফেডারেশন (আইএসএফ)। শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন দমাতে পাকিস্তানে কয়েকদিন ধরে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইন্টারনেটে ধীরগতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে অনলাইন যোগাযোগ।
ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাকিস্তানি ফ্রিল্যান্সাররা। তাদের কাজ চলে আসছে বাংলাদেশ-ভারতসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে।
জিও নিউজের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ধীরগতি এবং আংশিক বিভ্রাটের সম্মুখীন হচ্ছেন, বিশেষ করে মোবাইল ডেটা ব্যবহারের সময়।
তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (পিটিএ)। এক ফ্রিল্যান্সার জিও টিভিকে বলেন, “আমরা সবাই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অনেক ফ্রিল্যান্সার সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহক হারিয়েছেন। আমরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমাদের কাছে পাঠানো ফাইল পাঠাতে বা ডাউনলোড করতে পারছি না।”
অবশ্য, ইন্টারনেটে ধীরগতির জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা খাজা।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভিপিএন ব্যবহারের জন্য সারা দেশে ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়া সম্ভব নয়। বড়জোর যে ডিভাইসে ভিপিএন ব্যবহার হচ্ছে, কেবল সেটিরই গতি কমতে পারে।
একজন ফ্রিল্যান্সার কম্পিউটার বিজ্ঞানী দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “ফ্রিল্যান্সিং সম্প্রদায়ের অনেক লোক গ্রাহক হারিয়েছেন, যারা প্রতি মাসে তাদের মোটা অর্থ প্রদান করতেন। এদের মধ্যে অনেকেই এটির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তিনি জানান, পাকিস্তানের অনেক সফটওয়্যার হাউজ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ জমা দিতে পারছে না। এর ফলে গ্রাহকরা অর্ডার বন্ধ করে দিচ্ছেন।”
এদিকে পাকিস্তানে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় অর্ডারের কাজ ঠিকমতো দিতে পারছেন না ফ্রিল্যান্সাররা। ফলে কোম্পানিগুলো তাদের অর্ডারগুলো অন্য দেশগুলোতে দিচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের দিকে তারা চলে যাচ্ছেন। করাচিভিত্তিক এ ফ্রিল্যান্সার বলেন, “গ্রাহকরা আমাদের বলেছে, তারা আরও ভালো বিকল্পের সন্ধান করবে। এর মূল কারণ ইন্টারনেট আউটেজ। তারা প্রত্যেক মিনিটের মূল্য দেয়। তাদের কাছে প্রতিটি আপডেট এবং নির্ধারিত সময় গুরুত্বপূর্ণ।”
অ্যামাজনের জন্য গত এক দশক ধরে ফ্রিল্যান্সিং করছেন ফারাজ আহমেদ। তিনি জানান, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় ডেস্কটপ কম্পিউটারে সংযোগ পেতে সমস্যায় পড়েছেন পাকিস্তানের হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সার। তারা বিদেশি গ্রাহকদের জন্য কাজ করছিলেন। ক্ষোভপ্রকাশ করে ফারাজ বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি ৩০ শতাংশ কাজ হারিয়েছেন। যেগুলো ভারত ও বাংলাদেশে চলে গেছে।”
মুহাম্মদ জুবাইর নামে আরেক ফ্রিল্যান্সার জানান, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফাইভারে তার একটি ‘ফ্রেশ অ্যাকাউন্ট’ ছিল এবং তিনি মাসে প্রায় এক হাজার মার্কিন ডলার আয় করছিলেন। কিন্তু তিনি যখন ভিপিএনের সাহায্যে অ্যাকাউন্টটিতে প্রবেশ করেন, তখন সেটি সাময়িকভাবে ‘আনঅ্যাভেইলেবল’ করে দেওয়া হয়। পরে অ্যাকাউন্টটি ব্লকই করে দেয় ফাইভার। এখন তাকে আবার সব নতুন করে শুরু করতে হবে।