বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সুযোগ বাড়বে বলে একমত সবাই। আর সংস্কারপন্থিদের আশঙ্কা দেশকে দ্রুত সংস্কারের দিকে নিয়ে যেতে না পারলে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতির স্মৃতি সাধারণ মানুষের স্মৃতি থেকে ফিকে হতে শুরু করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদভিত্তিক বহুল প্রচারিত সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষকদের এমন বক্তব্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এমন মন্তব্য করেছেন। যিনি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছেন না।
প্রতিবেদনে কুগেলম্যান বলেন, “হাসিনার প্রত্যাবর্তন বেশ সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাস ঘাঁটুন। দেখবেন, পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে দেউলিয়া মনে হলেও এ দলগুলোকে একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলতে পারবেন না।”
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শহিদুল হক বলেন, “ব্যাপক রাজনৈতিকীকরণ হওয়া আমলাতন্ত্র আদতেই সংস্কার বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করছে। সংস্কারে বাধা দিতে হেন প্রচেষ্টা নেই, যা এই প্রশাসন করছে না। তারা এই সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আর দৃশ্যমান কোনো উন্নতি না হলে মানুষ ধৈর্য হারাবে।”
শহিদুল হক বলেন, “এমন পরিস্থিতির জন্যই আশায় আছেন শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। বর্তমান ‘আইনবিহীন’ পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল বলেন, “তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যদি এক বছর বা ১৮ মাস দেশ পরিচালনা করতে চায়, তাহলে ঠিক আছে।”
অবশ্য, অন্য পর্যবেক্ষকরা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কুগেলম্যানের মতো এতটা আত্মবিশ্বাসী নন। নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষক মুবাশার হাসান প্রতিবেদনে বলেন, “সারা বাংলাদেশে হাসিনার পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে, বিকৃত করা হয়েছে। তাকে স্বৈরাচার হিসেবে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম হাসিনার লিগ্যাসিকে এভাবেই দেখছে।”
টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকাভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, “আগামী দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনা ও তার দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হলে এই প্রেক্ষাপট বদলে যেতে পারে।”
শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশ ও সংখ্যালঘুরদের ওপর ব্যাপক হামলার অভিযোগ উঠে আসা নিয়ে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, “এসব ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। কোনো দাঙ্গা হয়নি। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বড় আকারের আক্রমণ দেখিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙেও পড়েনি।”
অবশ্য, শেখ হাসিনার ছেলে জয় অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “শেখ হাসিনা নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য দেশে ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”