• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন আজ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন আজ
অযোধ্যায় নির্মিত রাম মন্দিরের প্রতিকৃতি। ছবি: এনডিটিভি

ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির দল ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দীর্ঘ ৫০ বছরের স্বপ্ন উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার রামমন্দির। অবশেষে তাদের স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) ১ হাজার ৮০০ কোটি ভারতীয় টাকারও বেশি ব্যয়ে  নবনির্মিত এ মন্দিরের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতজুড়ে রামমন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করা হবে। সারা দেশে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা ও অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে দীপাবলির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। হিন্দুধর্মের অন্যতম দেবতা রামের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এই দিন অর্থাৎ দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়।

এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে টানা ১১ দিন হিন্দুধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় সময় দুপুর ১২টার পর শুরু হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মোদি রামমন্দিরের ভেতরেই থাকবেন। তবে ওই সময়ে তিনি কী করবেন, তা জানানো হয়নি। রামলালার বিগ্রহে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র আচার-অনুষ্ঠান শুরু হবে ১২টা ৫ মিনিটে। টানা ৫০ মিনিট ধরে অনুষ্ঠান চলবে। ১২টা ৫৫ মিনিটে সব আচার-অনুষ্ঠান সেরে উদ্বোধনস্থল ছেড়ে বেরোবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ঐতিহাসিক প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে দেশের সব প্রধান আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষও উপস্থিত থাকবেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রামমন্দির নির্মাণকারী শ্রমিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন মোদি। এ ছাড়া তিনি কুবের টিলায় পুনঃস্থাপিত প্রাচীন শিবমন্দিরেও যাবেন এবং সেখানে প্রার্থনা করবেন। 

উত্তর ভারতের ‘নগর ধাঁচে’ নির্মিত এই মন্দিরটির আয়তন ৯৫ হাজার বর্গফুট। এই মন্দিরটিতে ৩৯২টি পিলার আছে এবং আছে ৪৪টি দরজা। মন্দিরটির দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। মন্দিরের সবচেয়ে পবিত্র জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে রামের পাঁচ বছর বয়সের একটি মূর্তি। অপরদিকে, শিবের পুনঃস্থাপিত মন্দিরটি অবস্থিত রামমন্দির কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। এই মন্দিরের পাশেই ‘সীতা কূপ’ নামে একটি কুয়া আছে। ধারণা করা হয়, এই কুয়াটি কয়েক হাজার বছরের পুরোনো।

রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১১ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে বিজেপির মতাদর্শিক মাতৃ সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা এরই মধ্যে মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন। এ ছাড়া মন্দিরের শহর বলে পরিচিত অযোধ্যায় নতুন করে সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিক একটি বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশনকে।

অনুষ্ঠান ঘিরে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অন্তত ৮০০০ মানুষ উদ্বোধনের সময়ে অযোধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। থাকছেন তারকা অতিথিরাও।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। এ ছাড়া শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও জানিয়ে দিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে তারা যাবেন না।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরেই রামমন্দির প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বড় একটি অংশের দাবি, এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ঐতিহাসিক রাম জন্মভূমির ওপর। সেই সূত্র ধরেই মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে বাবরি মসজিদ ও আশপাশের জমিকে মন্দিরের জন্য নির্ধারণ করেন এবং মুসলমানদের মসজিদের জন্য একটি বিকল্প প্লট দেওয়ার নির্দেশ দেন।

তবে বাবরি মসজিদ ও রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি আদালতে ওঠে ভারত স্বাধীনের পরপরই। সে সময় হাজারো করসেবক সদস্য আদালতে গিয়েছিলেন ১৬ শতকে নির্মিত বাবরি মসজিদটি ভেঙে ফেলার আবেদন নিয়ে। তাঁদের আবেদনের ভিত্তি ছিল তাঁদের বিশ্বাস। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এই মসজিদটি ভগবান রামের জন্মস্থানে চিহ্নিত একটি মন্দিরের ওপরে নির্মিত হয়েছিল।

যাহোক, বিগত এক দশক ধরেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাবরি মসজিদের স্থলে রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টিসহ বেশির ভাগ বিরোধী দলই এই মন্দির উদ্বোধনের বিষয়টি নিয়ে শীতল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিজেপি নির্বাচনের বছরে ধর্ম ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করার চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!