• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

একের পর এক মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ, বড় যুদ্ধ কি আসছে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম
একের পর এক মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ, বড় যুদ্ধ কি আসছে
ছবি : সংগৃহীত

পেজার (তারবিহীন যোগাযোগের যন্ত্র) বিস্ফোরণের পর বুধবার লেবাননজুড়ে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। এবার ওয়াকিটকি, ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি রেডিও, গাড়ির বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত ও ৪৫০ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহার করা পেজার বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত ও প্রায় ৩ হাজার লোক আহত হন। পেজারগুলোতে আগে থেকেই স্বল্প পরিমাণে হলেও শক্তিশালী বিস্ফোরক ভরা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাহলে কি বড় যুদ্ধ আসছে?

মঙ্গলবারের মতো বুধবারও বিভিন্ন স্থানে যুগপৎভাবে যন্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরিত সব ওয়াকিটকি, ল্যাপটপ, রেডিও এবং আগুন লেগে যাওয়া বিভিন্ন আবাসিক ভবনের ছবি লোকজন দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করতে থাকেন।

লেবাননজুড়ে আসলে কী ঘটছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে আল-জাজিরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, বিভিন্ন গাড়িতে আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া উঠছে একটি আবাসিক এলাকা থেকে। খবরে বলা হয়, ওয়াকিটকি, রেডিও, গাড়ি, এমনকি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বিস্ফোরিত হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, বিভিন্ন গাড়িতে আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া উঠছে একটি আবাসিক ভবন থেকে। খবরে বলা হয়, ওয়াকিটকি রেডিও, মুঠোফোন, এমনকি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বিস্ফোরিত হচ্ছে।

আল-জাজিরার সংবাদদাতা আলী হাশেম একটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। দক্ষিণ লেবাননে এক দাফন অনুষ্ঠান চলার সময় একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হতে দেখেন তিনি। দৃশ্যত, কোনো ড্রোন হামলায় নয়; বরং ভেতর থেকেই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।

আলী হাশেম বলেন, এদিন দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে একের পর এক ওয়াকিটকি ও অন্যান্য যন্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটে; যেগুলো পেজার ছিল না।


সম্ভবত আমরা বিস্ফোরণের আরেকটি ঢেউ দেখতে চলেছি। এমনিতেই গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনায় লেবাননের পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাতে হিমশিম অবস্থা। এরই মধ্যে আজ (বুধবার) আবার বিস্ফোরণ। 

লেবানন থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা আলী হাশেম আরও বলেন, বিস্ফোরণ ঘটতে থাকায় সড়কে–সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে ছোটাছুটি করতে থাকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে থাকে আরও বিস্ফোরণের খবর।

এই সংবাদদাতা বলেন, ‘সম্ভবত আমরা বিস্ফোরণের আরেকটি ঢেউ দেখতে চলেছি। এমনিতেই গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনায় লেবাননের পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাতে হিমশিম অবস্থা। এরই মধ্যে আজ (বুধবার) আবার বিস্ফোরণ।’

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে এক দাফন অনুষ্ঠানে একটি বিস্ফোরণের পর সেখানে উপস্থিত লোকজন দ্রুত তাঁদের সঙ্গে থাকা ওয়াকিটকি রেডিওর ব্যাটারি খুলে ছুড়ে ফেলতে থাকেন।

বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার খবর আসছে। এর মধ্যে আছে ওয়াকিটকি, রেডিও, ল্যাপটপ, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল, এমনকি মোবাইলে ফোনও। কিছু গাড়ি বিস্ফোরিত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু গাড়িগুলো নিজস্ব ত্রুটিজনিত, নাকি এর ভেতরে থাকা কোনো যন্ত্রের কারণে (ওয়াকিটকি, ল্যাপটপ, মুঠোফোন ইত্যাদি) বিস্ফোরিত হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।

পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় এসব যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটা যোগসাজশ আছে। যন্ত্রগুলোতে ১ থেকে ৩ গ্রাম শক্তিশালী বিস্ফোরক ভরা হয়ে থাকতে পারে; যেমনটা ঘটেছে পেজারের ক্ষেত্রে। তবে কিছু হিজবুল্লাহ সদস্যের ধারণা, এসব বিস্ফোরণ যন্ত্রগুলোর ব্যাটারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে এক দাফন অনুষ্ঠানে একটি বিস্ফোরণের পর সেখানে উপস্থিত লোকজন দ্রুত তাঁদের সঙ্গে থাকা ওয়াকিটকি রেডিওর ব্যাটারি খুলে ছুড়ে ফেলতে থাকেন।

গত দুইদিনের বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ ও লেবানন সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। কিন্তু গতকাল বিস্ফোরণের ঘটনার পর নিজেদের সেনাদের প্রশংসা করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা পর্বে রয়েছি। এখন আমাদের সাহস, সংকল্প ও উদ্যম দরকার।’

বড় যুদ্ধ কি আসছে

এমনিতে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংঘাত আর গাজায় সীমাবদ্ধ নেই। ইসরায়েলি গোলায় বা তাদের অবরোধের কারণে ক্ষুধা‑তৃষ্ণায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু এখন অনেকটাই ‘সাধারণ’ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ড্রোন‑ক্ষেপণাস্কত্র ইত্যাদির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর এই যুদ্ধে সংযোগও ঘটে গেছে অনেক আগেই। 

আর মুখে শান্তির কথা বলে অশান্তির সব আয়োজন সম্পন্ন করা সেই মার্কিন গোষ্ঠীর পর্দার আড়ালের নড়াচড়া তো আর অপ্রকাশ্য কোনো বিষয় নয়। ফলে এক রকম আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণতি পাওয়ার সব উপাদান এই যুদ্ধের এমনিতেই আছে। এর সাথে ইরান কোনোভাবে সরাসরি যুক্ত হলে সামরিক সক্ষমতা বিচারে, বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানা থাকার বিচারে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা

গাজা যুদ্ধ যে এরই মধ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, তার বহু নজির সামনে আনা যায়। কয়েকটির কথা উল্লেখ করা যাক। গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর কিছু পরই এতে হামাস ও গাজার পক্ষে দাঁড়ায় হিজবুল্লাহ। লেবানন থেকে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালায়, যা এখনো অব্যাহত। ইয়েমেন থেকে যোগ দিয়েছে হুতিরা। 

তারা লোহিত ও আরব সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। উভয় গোষ্ঠীই হামলার ক্ষেত্রে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। হুতিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এমনকি তেল আবিবেও আঘাত করেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইরাক ও সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠী।

এই যুদ্ধাবস্থা চলতে থাকলে এবং ইরানকে পোষ মানানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হলে ইরান সরাসরি এই যুদ্ধে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। তেমনটি হলে মিত্র হিসেবে না হলেও আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই রাশিয়া ও চীন যুদ্ধের পেছনের কারিগরের ভূমিকায় ঢুকে পড়বে নিশ্চিতভাবে। 

এতে যুদ্ধের ময়দান মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত না হলেও ওই অঞ্চল ও মিনা অঞ্চলে যে বিস্তৃতি ঘটাবে সন্দেহ নেই। আর যুদ্ধ তো শুধু ময়দানে আবদ্ধ থাকে না। পণ্যের দাম, নৈতিক অবক্ষয়, অর্থনৈতিক বহুবিচিত্র সংকটের পথ ধরে যুদ্ধ তো ময়দান থেকে অতি দূর ঘরেও প্রবেশ করে। তার ধক নেওয়ার জন্য বিশ্ব ও এর মানুষ প্রস্তুত কি?

Link copied!