গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। প্রস্তাবটির খসড়া অনুলিপি ইতিমধ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং যুদ্ধের তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে পাঠানোও হয়েছে।
প্রস্তাবে প্রথম দফায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধ জিম্মিদের ছাড়ার বিনিময়ে ৭০০ থেকে ১০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চেয়েছে হামাস। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদন বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামাসের এই প্রস্তাবের ফলে পবিত্র রমজান মাসেই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, নতুন প্রস্তাবে হামাস বলেছে, ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যদি গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ৭০০ থেকে ১০০০ জনকে মুক্তি দেয়-তাহলে জিম্মিদের মধ্যে থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থদের ছেড়ে দেবে তারা।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, যদি এই যুদ্ধবিরতি সফল হয়-তাহলে উভয়পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে।
হামাসের দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। যার মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যদিও বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘অবাস্তব’ দাবির ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে।
তবে শুক্রবার ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিভায় হামাসের নতুন প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে বলে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে।
মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিশরের কর্মকর্তারা হামাসের প্রস্তাব সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। রয়টার্সকে তারা বলেছেন, হামাস ও ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা-উভয়পক্ষের মধ্যকার যাবতীয় মতবিরোধ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তারা এবং এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় অবিলম্বে অন্তত ছয় সপ্তাহের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
১১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া রমজান উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় আরও মানবিক ত্রাণ পেতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আর হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলিদের মুক্তির চুক্তির অংশ হিসেবে অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় বিরতিহীনভাবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, “আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী, নিরাপত্তা ও শান্তির জন্যও কাজ করে যাব। যার মধ্যে রয়েছে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান; যা ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের সমান স্বাধীনতা, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এটিই স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ।”
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে। এ ঘটনার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৭২ হাজার ১৯৮ জন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মানবিক বিরতি ঘোষিত হয়েছিল গাজায়। সে সময় ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তার পরিবর্তে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরাইল।