মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ে শহরে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি এবং বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া একটি মোবাইলে টাওয়ার ভেঙে পড়ায় রাজ্যের কিছু অংশে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক মানুষকে।
রোববার (১৪ মে) দেশটির সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকাল থেকেই মোখার প্রভাবে সিত্তওয়ে ও দক্ষিণে থান্ডওয়ে শহরে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি লক্ষ করা গেছে।
বিকেলে সিত্তওয়েতে প্রবল বাতাসে একটি টাওয়ার ভেঙে যাওয়ায় রাখাইন রাজ্যের কিছু অংশে কিছু মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে জলোচ্ছ্বাস ও শক্তিশালী বাতাসের কথা বলা হয়েছে। সিত্তওয়ের কিছু অংশে বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে একটি গাছ পড়ে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধারকারী দলগুলো জানিয়েছে, বন্যা এবং প্রবল বাতাসের কারণে বাড়িঘর এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
মিয়ানমারের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাখাইন উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ১২০ মাইল বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে, যেখানে জোয়ার-ভাটা ২০ ফুট পর্যন্ত পানির উচ্চতার বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর আগে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের পর যখন ঘূর্ণিঝড়টি সিত্তওয়েতে আঘাত হানে তখন এর প্রভাবে গাছা-পালা উপড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি বাতাসের তীব্র গতির কারণে বাড়ি-ঘরও কেঁপে ওঠে।
এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কায় দেশের বহু এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে মিয়ানমার। এ ছাড়া দেশটির উপকূলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক মানুষকে।
দক্ষিণ রাখাইন উপকূল থেকে প্রায় দুই মাইল অভ্যন্তরের এক গ্রামের বাসিন্দা জানান, শনিবার রাত ১০টা থেকেই প্রবল বাতাসে প্রায় ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশির ভাগ বাসিন্দা বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছেন।
মিয়ানমারের ন্যাচারাল ডিজাস্টার রেসপন্স কমিটি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখায় রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক-উ শহরে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষজনের জন্য খাদ্য ও ওষুধের প্রয়োজন।
এক বিবৃতিতে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সমন্বয়কারী রামানাথন বালাকৃষ্ণান বলেছেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করার জন্য ‘প্রস্তুত’ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি দেশের রাখাইন ও চিন প্রদেশ এবং ম্যাগওয়ে ও সাগাইং অঞ্চলগুলোকে প্রভাবিত করবে। আর এসব অঞ্চল ইতোমধ্যেই দেশে চলমান সংঘাতের কারণে বড় মানবিক সংকটের মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে যাচ্ছে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।