ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি মসজিদে জরিপকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারজনে। এ ঘটনার পর সাম্ভালে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এক দিনের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সহিংসতার অভিযোগে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে সামভালের সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বার্ক এবং তার দলের সহকর্মী ইকবাল মাহমুদের ছেলে নবাব সুহেল ইকবালকে। ইতোমধ্যে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বার্তাসংস্থা এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরপ্রদেশের সামভাল জামে মসজিদটি যেখানে তৈরি করা হয়েছে সেখানে আগে মন্দির ছিল- এমন দাবি করে আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। এরপর আদালত তাদের পিটিশনের ভিত্তিতে সেখানে জরিপ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে জরিপ চালাতে গিয়েছিল একটি দল। কিন্তু তাদের জরিপ চালাতে বাধা দেন সেখানকার মুসল্লিরা। তারা পুলিশ ও জরিপকারী দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, একজন অ্যাডভোকেট কমিশনারের নেতৃত্বে রোববার সকালে মসজিদটিতে গিয়েছিল জরিপকারী দল। ওই সময় সেখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ জড়ো হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ ও জরিপকারী দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ওই সময় উপস্থিত জনতা ১০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ তখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে উপস্থিত মুসলিম জনতাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের ফলে সেখানে চার মুসলিমের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পুলিশের সুপারিনটেনডেন্টের গানারসহ ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মোরাদাবাদ ডিভিশনাল কমিশনার অঞ্জনেয়া কুমার সিং।
যেসব হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি মসজিদের জায়গায় মন্দির থাকার দাবি করেছেন, তারা আদালতের পিটিশনে বলেছেন, মুঘল শাসক বাবরের আমলে ১৫২৯ সালে মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
সমালোচকরা বলেছেন, মূলত উত্তেজনা তৈরি করতেই মসজিদটিতে জরিপ চালানোর মতো নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এর মাধ্যমে ভারতের উপাসনা আইন ১৯৯১ ভঙ্গ করা হয়েছে। এ আইনে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর পবিত্রতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
প্রায় ৫০ জন আহত ও চারজকে হত্যার পরও মসজিদটিতে জরিপ চালিয়েছে জরিপকারী দল। তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মসজিদটির বিভিন্ন জায়গার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেছেন। আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে আদালতের কাছে জরিপের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে উত্তেজনা তৈরি করেছে। তারা মূলত সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করে নিতে এ কাজ করেছে।