লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ১০০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে দেশটি। ৯০ দশকের পর এই প্রথম এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ল মেসির দেশ।
বুধবার (১৫ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ৯০-এর দশকের গোঁড়ার দিকে হাইপারইনফ্লেশন শেষ হওয়ার পর আর্জেন্টিনার মুদ্রাস্ফীতির হার প্রথমবারের মতো ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
দেশটির পরিসংখ্যান সংস্থা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ১০২ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। এর অর্থ হলো ২০২২ সালের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। দেশটি বিগত কয়েক বছর থেকেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম সীমাবদ্ধ করে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার চেষ্টা করছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির এই হারের কারণে আর্জেন্টিনায় দ্রব্যমূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির বাজার, দোকান এবং বাড়িগুলোতে মানুষের কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাটকীয়ভাবে খাদ্য ও পানীয়র দাম সবচেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য ও পানীয়র দাম ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, গত ১২ মাসের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতি ১০২ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা গ্রাহক মূল্য সূচকে (সিপিআই) মাসিক উচ্চ-প্রত্যাশিত ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হারেরও বেশি এবং বছরের শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি।
রাজধানী বুয়েনস আইরেসের সান ফার্নান্দোর একটি বাজারে পণ্যের দাম দেখছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আইরিন দেবিতা। তিনি বলেন, “কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, কোনো টাকা নেই, মানুষের কাছে কিছুই নেই, তাহলে তারা কিভাবে কিনবে? অন্যদিন আমি এসে তিনটি ট্যানজারিন, দু’টি কমলা, দু’টি কলা এবং আধা কেজি টমেটো চেয়েছিলাম। দোকানি আমাকে সবমিলিয়ে দাম ৬৫০ পেসো বলার পর আমি তাকে সবকিছু বের করে রেখে শুধু টমেটো দিতে বলি। কারণ আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না।”
দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত চার সপ্তাহের ব্যবধানে তিনজন অর্থমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে।
সংকট মোকাবিলায় ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আরও ৬ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে জীবনযাত্রার ব্যয় মোকাবেলায় পদক্ষেপের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল দেশটির নাগরিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে শস্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।