ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম তাণ্ডবে ভারতের তামিলনাডু ও অন্ধ্র প্রদেশে রোববার থেকে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি বাংলার
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকে কিছু এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি হলেও চেন্নাই শহরের অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে।
অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
প্রদেশের বাপাতলার কাছে মঙ্গলবার দুপুরে ঘুর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ার কথা। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।
দুই রাজ্যেই হাজার হাজার গাছ আর বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। একরকম স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবহন ব্যবস্থা। দুই রাজ্যেই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে এবং অন্ধ্র প্রদেশের চারটি জেলায় স্কুল-কলেজ, ব্যাংকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
পানির নিচে চেন্নাই শহর
মিগজাউমের প্রভাবে ঘরবাড়ি ধসে পড়া ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী চেন্নাইয়ের পুরো শহরটাই পানিতে ডুবে আছে সোমবার থেকে।
শহরটির কোথাও গলাসমান পানি, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। সড়কে থাকা অনেক যানবাহন পানিতে ডুবে গেছে।
চেন্নাইয়ের সব সড়কে পানি
তামিলনাডুর বন দপ্তরের সচিব সুপ্রিয়া চাগু সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্ট করে জানিয়েছেন, চেন্নাইয়ের বেশ কিছু জলাভূমি এলাকায় কুমির থাকে। এরা এমনিতে নিরীহ এবং সাধারণত মানুষের থেকে দূরেই থাকার চেষ্টা করে। তবু কুমির দেখলে সেটির কাছে মানুষ যাতে না যান, সেই সতর্কবার্তাও দিয়েছে বন দপ্তর।
ভেঙে পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থা
প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে চেন্নাইয়ের পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। সড়কে বিভিন্ন রকমের যানবাহন আটকে আছে। কয়েকটি সুড়ঙ্গপথও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অন্তত দেড় শটি ট্রেন। সোমবার অতিবৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ার কারণে চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে চেন্নাই ও আশপাশের এলাকার ইলেকট্রনিকস শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শহর পৌর প্রশাসনমন্ত্রী কে এন নেহরু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চেন্নাইয়ে বসবাসকারী প্রায় তিন লক্ষ মানুষ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যেখানে লোকেরা বাইরে বের হতে পারছেন না, সেখানে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে সরকার। অনেক নৌকা করে উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। সড়কে বড় বড় গাছ পড়ে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটেছে। দমকল বাহিনী ও পুলিশ উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্ধ্র প্রদেশের পরিস্থিতি
এদিকে তেলেগুর উপকূলে ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার পূর্ব গোদাবরী, পশ্চিম গোদাবরী, এলুরু, কৃষ্ণা, এনটিআর, গুন্টুর, বাপাতলা ও পালনাডু প্রকাশম জেলার কয়েকটি জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি নেল্লোর এবং বাপাতলার কাছেই উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। গত ২৪ ঘণ্টায় নেল্লোর ও তিরুপতি জেলার বেশ কিছু অংশে ২৫ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
প্রবল বর্ষণের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন হাজার হাজার বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে। প্রায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আরও ৩০ হাজার হেক্টর জমির কাটা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।