তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে গোটা ভারত। দিল্লি যেন জ্বলন্ত চুল্লি হয়ে পড়েছে। মে মাস থেকে দিল্লিতে দৈনিক তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। তাপদাহের মধ্যেই পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে অঞ্চলে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে গত ১ মার্চ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২৪ হাজার ৮৪৯টি হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫৬ জনের। এমন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলছেন খোদ চিকিৎসকরা।
দিল্লির স্বনামধন্য এক হাসপাতালের চিকিৎসক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আমি এর আগে এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।” উত্তর প্রদেশের রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের (আরএমএলএইচ) চিকিৎসক ড. অজয় চৌহান বলেন, ১৩ বছরের কর্মজীবনে হিট স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুতে কোনো ডেথ সার্টিফিকেটে সই করেছি বলে মনে পড়ে না। অথচ এই বছর বেশ কয়েকটিতে সই করা লেগেছে আমার।”
আরএমএলএইচের বিশেষায়িত হিট স্ট্রোক ক্লিনিকে চিকিৎসকেরা হিট স্ট্রোকের রোগীদের বাঁচাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস শরীরের তাপমাত্রা নিয়ে হিট স্ট্রোকে ভোগা এক রোগী এসেছিলেন হাসপাতালে।
ওই রোগীকে হাসপাতালের ২৫০ লিটারের একটি সিরামিক টবে বরফ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। যেখানে তাপমাত্রা শূন্য থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। সেখানে দুইটি সিরামিক টব, একটি ২০০ কেজি বরফ তৈরির মেশিন, রেকটাল থার্মোমিটার, আইস বক্স এবং ইনফ্ল্যাটেবল টব রাখা আছে।
আরও বেশি চিকিৎসা সেবার জন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার আগে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লেগে যায়। ডা. চৌহান বলছিলেন, “দ্রুত শরীরকে ঠান্ডা করা জীবন বাঁচায়। প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।” তিনি মনে করেন, সামান্য বিলম্বও মারাত্মক হতে পারে। এতে রোগীর রক্তক্ষরণ হতে পারে বা কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির ৬ হাজার ৪০০ বস্তিতে ১০ লাখেরও বেশি পরিবার, নিম্নমানের ও ঘিঞ্জি আবাসনে বাস করে। যেখানে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ভালো ব্যবস্থা নেই। পুরুষরা বাইরে কাজ করতে গিয়ে এবং নারীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে চুলার পাশে রান্না করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কারণ, দিল্লিতে সবুজ জায়গার অভাব। গ্রীষ্মে শহরটি একটি জ্বলন্ত চুল্লিতে পরিণত হয়। ওপর থেকে সূর্যের উত্তাপ এবং নিচের তপ্ত মাটি জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তোলে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত এক দিনমজুরের স্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ঘরের একমাত্র পাখা কাজ করছিল না। তার স্বামী, ক্লান্ত হয়ে ঘরে এসে ঘুমাতে পারতেন না। পরে খিঁচুনি, বমি এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। রাতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
মূলত, যাদের জীবিকার টানে ঘরের বাইরে থাকতে হয়, তারাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। গরমের কারণে দিল্লির রাস্তার বিক্রেতাদের ওপর তাপ ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
সূত্রমতে, ২০২২ সালে ভারতে ২০৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এরমধ্যে কেবল দিল্লিতেই প্রায় ১৭ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। মার্চ মাসকে আবহাওয়া দপ্তর ভারতের উষ্ণতম মাস হিসেবে রেকর্ড করেছিল। ৭২ বছরের মধ্যে এপ্রিলে দিল্লিতে দ্বিতীয় উষ্ণতম এপ্রিলের সাক্ষী হয়েছিল। সতর্ক করে ড. চৌহান বলেন, “এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।”