পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ধর্ষণ ও হত্যা, প্রকাশ্যে গুলি চালানোসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার জন্য সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালগুলোকে দায়ী করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, ইউটিউব, ফেসবুকে প্রচারিত বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ভিডিও এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রোববার ( ৬ অক্টোবর) কলকাতা পুলিশের আবাসিক পূজার উদ্বোধন করেন মমতা।
এ সময় তিনি বলেন, ইউটিউবের প্রভাব পড়ছে শিশুদের মধ্যে। সেখান থেকে খারাপগুলো শিখছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টেলিভিশনে যত সিরিয়াল দেখবেন সেখানেও একাধিক অপরাধমূলক দৃশ্য দেখায়। যত সিনেমা রিলিজ হচ্ছে তাতেও ক্রাইম সিনে ভর্তি। আমি সিনেমাকে ছোট করছি না, বাংলা সিনেমা আরো বেশি করে বাড়ুক, এটা আমি চাই। কিন্তু টিভিতে সিরিয়ালগুলিতে ক্রাইমে ভর্তি থাকার কারণে আমিও দেখতে পারি না, টিভিটা বন্ধ করে দিই। এই ক্রাইম দেখে অনেকে সেই ক্রাইমগুলো অনুসরণ করে।
মমতার প্রশ্ন, কীসের জন্য এত ক্রাইম দেখানো হবে? সমাজকে কেন অবক্ষয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছেন! তাদের কি দায়বদ্ধতা নেই? শুধু পুলিশকে গাল দিলেই হবে? আমাকে গাল দিলেই হবে? আপনাদের নিজেদের দায়বদ্ধতা কোথায়?
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার করা হয়। এরপর গত ২ মাস ধরে একাধিক ঘটনা ঘটে চলেছে রাজ্যটিতে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের এক ৯ বছরের ছাত্রীর সঙ্গে ঠিক একই ধরনের জঘন্যতম ঘটনা ঘটে। ঠিক তার একদিন পর শনিবার(৫ অক্টোবর) পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে এক নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরে গণপিটুনি দেয় স্থানীয় উত্তেজিত মানুষ। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় অভিযুক্তের।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের এই মন্তব্য। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে দু-একটা ঘটনা কখনো ঘটে গেলে চিৎকার চেঁচামেচি, হাহাকার শুরু করে দিচ্ছে। মানুষের তা করা উচিত এবং তাদের সেই অধিকারও আছে। কিন্তু কেউ কি ইচ্ছা করে কখনো এসব ঘটায়?
এই সময় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহারের বিষয় জনগণকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি বারবার সবাইকে সতর্ক করছি। এখন এআই-এর যুগ। সেখানে আমার ছবি দেখবেন, আমার শরীর দেখবেন, আমার গলায় আমার বক্তব্য শুনবেন। কিন্তু ওটা ভুয়া, ওটা আসল নয়। এটাকেই বলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
ভুয়া ভিডিও রুখে দেওয়ার জন্য রাজ্যের মানুষকে জোট বাধার আহ্বানও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা এই কাজটা রুখতে পারবেন। মমতার বার্তা ‘ক্রাইম ইজ ক্রাইম। অপরাধের মধ্যে কোনো ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, জাতি নেই। যে অপরাধ করবে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
যদিও মমতা এই বক্তব্য নিয়ে আরজিকর কাণ্ডে অভয়ার (ছদ্মনাম) মা বলেছেন, কোনটা ঘটনা আর কোনটা দুর্ঘটনা তা রাজ্যবাসী বুঝতে পারছেন। পুলিশ যদি তথ্য প্রমাণ নষ্ট না করত; মেনে নিতাম আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা দুর্ঘটনা। আসলে রাজ্যটাকে এখন আর মুখ্যমন্ত্রী চালান না। পুলিশ দিয়ে চালানো হচ্ছে। তাই বাংলায় এত অপরাধ বেড়েছে।