গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো এখন ফিলিস্তিনের সমর্থনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বসে থাকেনি। বিক্ষোভ দমাতে চেষ্টা করছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানে বিক্ষোভকারীরা। ঘটছে নির্বিচার আটকের ঘটনাও।
মার্কিন মুল্লকে যখন এমন অস্থিরতা চলছে ঠিক তখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য কূটনীতিকেরা জড়ো হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিরতি। যুক্তরাষ্ট্রও হামাসকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুদ্ধবিরতির। তবে ইসরায়েল তাদের কথা কানেই নিচ্ছে না।
অন্যদিকে, আবার মার্কিন বামপন্থীরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চান। তারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি দেখতে চান। তবে ডানপন্থি মার্কিনরা মনে করছেন, ক্যাম্পাসগুলোয় নজিরবিহীন এমন বিক্ষোভ শিক্ষার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে। শান্তিশৃঙ্খলা নষ্টের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নিজ দেশে আর বিদেশে এমন বিপরীতমুখী পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একেবারেই শাঁখের করাতের মধ্যে আটকে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নতুন এক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট মার্কিন প্রশাসনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে। বাম ও ডান- দুই মেরু থেকেই চাপ বাড়ছে বাইডেনের ওপর।
এদিকে, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওয়াশিংটন হামাস ও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করাতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। যে চুক্তিতে একদিকে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের কয়েকজনের মুক্তির সুযোগ রাখা হবে। অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আরও সহায়তা প্রবেশের সুযোগ থাকবে। ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তরাংশে ফেরার সুযোগের বিষয়টিও চুক্তিতে থাকতে পারে।
কয়েকদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান। গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর এটা ছিল তার সপ্তম মধ্যপ্রাচ্য সফর। এবারের সফরে আরব ও ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি রাফায় অভিযান ঠেকাতে শেষ চেষ্টা করেছেন। কারণ বিশ্লেষকদের ভাষ্য, রাফায় অভিযান মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তি আলোচনায় যেকোনো অগ্রগতি বাইডেন প্রশাসনের জন্য সুখবর বয়ে আনবে। স্বাগত জানাবে ওয়াশিংটন। কারণ, গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মানুষের রক্তপাত ও দুর্ভোগ কিছু সময়ের জন্য দূর হলেও বাইডেন প্রশাসনের ওপর জেঁকে বসা চাপ কমে আসবে।
মূলত, কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন থেকে সরে আসার জন্য বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন বাম ঘরানার ডেমোক্র্যাটেরা। তবে রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাইডেন এমন নীতিতে অটল। মার্কিন তরুণ ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের অনেকের মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে সমালোচনামূলক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। আর এই ভোটারদের বড় অংশই ডেমোক্র্যাটপন্থী।
বলতে গেলে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হোয়াইট হাউসে বাইডেনকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ এনে দেবে ঠিকই, তবে বাইডেনের সামনে থেকে শক্তিশালী রাজনৈতিক হুমকি দূর করার জন্য গাজায় যে ধরনের টেকসই শান্তি প্রয়োজন, তা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।