চালু হয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিথ্রো। নিকটবর্তী বিদ্যুৎ স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের জেরে প্রায় গোটা দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত থেকে ফের চালু হয়েছে বিমানবন্দরটি।
ঐদিন রাতে এক বিবৃতিতে ফ্লাইট পরিচালনা ফের শুরুর তথ্য নিশ্চিত করেছে হিথ্রো বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের কর্মীবাহিনী এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই ফের চালু করা সম্ভব হয়েছে ফ্লাইট পরিচালনা।
শিডিউল অনুসারে, শুক্রবার হিথ্রোতে উড্ডয়ন-অবতরণের কথা ছিল ১ হাজার ৩৫১টি ফ্লাইটের। এসব ফ্লাইটের মোট যাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৯১ হাজার। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হিথ্রোর পরিবর্তে ব্রিটেন এবং ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে ফ্লাইটগুলো ডাইভার্ট করা হয়েছিল।
হিথ্রো বিমানবন্দরের শীর্ষ নির্বাহী থমাস ঔল্ডবাই রয়টার্সকে বলেন, “শুক্রবার একেবারেই সীমিত সংখ্যক ফ্লাইট ওঠা-নামা করেছে। আশা করছি শনিবার থেকে বিমানবন্দর পরিষেবা আবার স্বাভাবিক হবে। বিমানবন্দর অচল হয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই….যে অসুবিধা ও বিড়ম্বনার মধ্যে তারা পড়েছেন, সেজন্য আমরা দুঃখিত।
বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের সংলগ্ন একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে আগুন ধরে যাওয়ায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও ব্যস্ত বিমানবন্দর হিথ্রো। ফলে ফ্লাইট পরিচালনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং নজিরবিহীন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা ও বিভিন্ন বিমান পরিষেবা সংস্থা।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ জানিয়েছে, এতে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে সাবস্টেশনে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
এদিকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিষেবা বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, তেমনি তা ক্ষুব্ধ করেছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিমান পরিষেবা সংস্থাকেও। সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন, হিথ্রো বিমানবন্দরের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অবকাঠামো স্থাপনা কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিকল থাকতে পারে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ থাকায় তাদের কোটি কোটি পাউন্ড লোকসান হয়েছে। এই লোকসান পুষিয়ে নিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার ব্যাপারটিও বিবেচনায় রয়েছে তাদের।
“এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানবন্দর, অথচ তাদের কোনো ব্যাক আপ পাওয়ার নেই। এটা কীভাবে সম্ভব?” রয়টার্সকে বলেন একটি বিমান পরিষেবা সংস্থার শীর্ষ নির্বাহী।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা থমাস ঔল্ডবাইয়ের সঙ্গে যেগাযোগ করা হলে হিথ্রোর তিনি বলেন, “এটা (বিদ্যুৎ সরবরাহ) আমাদের একটি দুর্বল পয়েন্ট, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু বিপর্যয় আমাদের সামনে আসে, যখন ১০০ শতাংশ সামর্থ্য থাকলেও আমরা তা প্রতিহত করতে পারি না। শুক্রবারের ঘটনাটিও এমনই ছিল।”
ব্রিটেনের পরিবহনমন্ত্রী হেইদি আলেক্সান্ডারও এ ইস্যুতে হিথ্রো বিমানবন্দরের শীর্ষ নির্বাহীর পাশে আছেন। শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “হিথ্রো বিমানবন্দরে যা ঘটেছে, তা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। তারপরও বিপর্যয় শুরুর পর তারা তাৎক্ষণিকভাবে তৎপরতা শুরু করেছে এবং আশা করছি তারা শিগগিরই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবে। আমি সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।
সূত্র : রয়টার্স