কমলা হ্যারিস: শৈশব থেকে হোয়াইট হাউস


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম
কমলা হ্যারিস: শৈশব থেকে হোয়াইট হাউস
ছবি : সংগৃহীত

এক দিন পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যে নির্বাচন ঘিরে জলপনা কল্পনার শেষ নেই বিশ্ববাসীর। এরই মধ্যে নানা রকম ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে। তবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে জোরালো আলোচনায় আছেন কমলা হ্যারিস। তাকে ঘিরে নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক তথ্য উঠে এসেছে। প্রথম এশিয়ান আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রাথমিক জীবন কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওকল্যান্ডে। তিনি ওকল্যান্ডেই জন্মগ্রহণ করেন। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তিনি।

কমলা হ্যারিসের মা, শ্যামলা গোপালন, একজন ভারতীয় তামিল জীববিজ্ঞানী। ভারতীয় ওই নারী একজন ক্যানসার গবেষক ও সমাজকর্মী। তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। কমলা হ্যারিসের বাবা ডোনাল্ড জে. হ্যারিস স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক। তার মা-বাবা পড়াশোনার সময় থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে থাকতেন। সাত বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর থেকে কমলা ও তার বোন মায়াকে লালন-পালন করেছেন তাদের মা।

 মা শ্যামলা গোপালানের সঙ্গে শিশু কমলা হ্যারিস। ছবি: সংগৃহীত

কমলা হ্যারিস এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক কার্স্টিন এমহফ ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায় বিয়ে করেছিলেন। এমহফের আগের পক্ষের দুই সন্তান কোল এবং এলার সৎ মা কমলা। বর্তমানে এমহফ এবং তার দুই সন্তান কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

স্বামী সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগ এমহফের সঙ্গে কমলা। ছবি: সংগৃহীত

কমলা কানাডার মন্ট্রিলের একটি হাইস্কুলে পাঁচ বছর পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গদের ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হাওয়ার্ডে থাকাকালীন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যালান ক্র্যানস্টনের জন্য একজন মেলরুম ক্লার্ক হিসেবে একাধারে ইন্টার্ন করেন, অর্থনীতি সোসাইটির সভাপতিত্ব করেন, ডিবেটিং দলের নেতৃত্ব দেন এবং আলফা কাপা মহিলা সংঘে যোগদান করেন।

প্রাথমিক জীবনে কমলা মায়ের কাছ থেকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝতে শেখেন। তবে তার নানা পিভি গোপালন দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়েছেন কমলা। গোপালন একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় বেসামরিক কর্মকর্তা। তার গণতন্ত্র এবং নারী অধিকারের বিষয়ে প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি কমলা হ্যারিসকে প্রভাবিত করেছিল। ২০০৪ সালে ওয়াশিংটনে বার্ষিক মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ফ্রিডম মার্চে অংশ নিয়েছিলেন কমলা।

কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাসের মহিলাদের সাথে কমলা হ্যারিস। ছবি: সংগৃহীত

ওয়াশিংটন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে আসেন কমলা। এরপর ১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার আলামেডা কাউন্টিতে একজন ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হোন। যেখানে তাকে ‘একজন উদীয়মান দক্ষ প্রসিকিউটর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এরপর খুব দ্রুত অঙ্গরাজ্যটির ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন। দায়িত্ব নেন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলের। 

কমলা হ্যারিসই প্রথম কৃষ্ণাঙ্ক হিসেবে সান ফ্রান্সিসকোর জেলা অ্যাটর্নি নির্বাচিত হয়েছেন ৫৬ শতাংশ ভোটে পেয়ে। ২০০৭ সালের নভেম্বরে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। পরে ২০১৬ সালে সেখানকার সিনেটর হন। 

২০২০ সালের নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের নির্বচিত হন। পরের বছর ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কমলা হ্যারিস। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা মার্কিন ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদমর্যাদার নির্বাচিত মহিলা কর্মকর্তা। আরেকটি সফলতা হলো তিনি প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান এবং প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট। 

হ্যারিস ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন সিনেটে শপথ নেন। ছবি: সংগৃহীত 

তবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই কোভিড-১৯ মহামারিতে সামাজিক অস্থিরতার মুখে পড়ে জো বাইডেন ও কমলার সরকার। সে সময়েই মিনিয়াপলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হন। এ ঘটনার জেরেও ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় এই সরকারকে।

ক্ষমতায় বসার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে কমলা হ্যারিসকে। তবে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশজুড়ে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে তিনি আবার সরব হয়ে ওঠেন।  

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা প্রথম ২০২১ সালে বিদেশ সফর করেন গুয়াতেমালা এবং মেক্সিকোতে। এ সফরের উদ্দেশ্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে লাতিন আমেরিকার অধিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসা (অভিবাসন) কমিয়ে আনা। তবে এই অভিবাসনসংক্রান্ত ইসুতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল কমলা হ্যারিসের। তিনি অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি এই অঞ্চলের লোকদের কাছে পরিষ্কার হতে চাই, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে সেই বিপজ্জনক ট্র্যাক করার কথা ভাবছে: এসো না. এসো না।"। তার এ বক্তব্যে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন।

কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফরের সময় গুয়াতেমালায়। ছবি: সংগৃহীত 

কমলার সময়ে বৈদেশিক নীতিসংক্রান্ত বিষয়গুলো যেমন- রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাত ও গাজাযুদ্ধ এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ইস্যু বেশ আলোচনায় ছিল। 

Link copied!