প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের খবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা শিরোনামে প্রতিবেদন দেখা গেছে। এসব গণমাধ্যমের মধ্যে রয়েছে আল-জাজিরা, গার্ডিয়ান, এএফপি, বিজনেস রেকর্ডার, এবিসি ও এপি।
আল–জাজিরা, গার্ডিয়ান, বিজনেস রেকর্ডার, লোকাল টুডে এবং দ্য পেনিনসুলা শিরোনাম করেছে ‘খাদ্যদ্রব্যের উচ্চ মূল্য নিয়ে খবর প্রকাশের কারণে বাংলাদেশে সাংবাদিক গ্রেপ্তার।’
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও এবিসি নিউজ ‘বিতর্কিত ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি সাংবাদিক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশ বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ‘মিথ্যা খবর ছড়ানোর’ অভিযোগে বুধবার (২৯ মার্চ) একটি প্রভাবশালী পত্রিকার একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের জন্য শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত খবরের বলা হয়েছে, দেশে খাদ্যদ্রব্যের উচ্চ মূল্য নিয়ে সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে বিতর্কিত গণমাধ্যম আইনে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে বুধবার ভোররাতে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজনেস রেকর্ডার তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ পুলিশ বুধবার একটি নেতৃস্থানীয় সংবাদপত্রের একজন প্রতিবেদককে ‘মিথ্যা খবর’ তৈরির জন্য অভিযুক্ত করেছে। লোকাল টুডে লিখেছে, খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর বিতর্কিত মিডিয়া আইনের অধীনে একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার একজন সাংবাদিককে আটক করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
আল–জাজিরার ওই প্রতিবেদনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের গত মাসে প্রকাশিত তথ্যের বরাতে বলা হয়, দেশের নিত্যপণ্যের দাম বছরে গড়ে ১ থেকে ১৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মাংসের দাম বেড়েছে গড়ে ৩৯ শতাংশ। চালের দাম ৩০ শতাংশ।
এর আগে বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান এলাকার ভাড়াবাসা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচয়ে শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাদের মধ্যে ৭—৮ জন বাসায় ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। বুধবার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। গোলাম কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
এরপর বুধবার রাত ১১টার দিকে অ্যাডভোকেট আবদুল মশিউর মালেক নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় আরও একটি মামলা করেন। এ মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী একজন ক্যামেরাম্যান এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিক শামসুজ্জামানের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।