• ঢাকা
  • রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ধসে পড়ার শঙ্কায় ইসরায়েলের অর্থনীতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম
ধসে পড়ার শঙ্কায় ইসরায়েলের অর্থনীতি
ইসরায়েলের পতাকা। ছবি : সংগৃহীত

দফায় দফায় যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়া, যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিপুল ব্যয় আর পুনর্গঠন কাজে অস্থিরতা ইসরায়েলের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে হু হু করে। দেশটির বিশাল উচ্চ প্রযুক্তি খাতে যুদ্ধের প্রভাব বেশি না পড়লেও নির্মাণ ও কৃষি খাত মন্থর হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের নির্মাণ আর কৃষি খাত অনেকাংশে নির্ভরশীল অনুমতি সাপেক্ষে ইসরায়েলের কাজ করতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর। অথচ গেল বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তাদের কাজের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এতে করে প্রযুক্তি খাতের বাইরে অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ ও কৃষি খাতে যুদ্ধের প্রভাব বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ইসরায়েল।

অন্যদিকে, দেশটির পর্যটন খাতের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। পর্যটন ব্যবসা কমে গেছে ৭৫ শতাংশের বেশি। স্বাভাবিক সময়ে জেরুজালেমের পুরোনো শহর আয়মান শাওয়ারে এমনিতে পর্যটকে গিজগিজ করলেও এখন সেখানে জনশূন্য। অনেক দোকানের ঝাঁপ অনেক আগে থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, আয়মান শাওয়ারে পারিবারিক বেকারির ব্যবসা গত ৭ অক্টোবরের পর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আইসক্রিম বিক্রেতাদের ব্যবসাও অনেকটা লাটে উঠেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী সবাই এখন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধে উত্তাপ যে তাদের জীবিকায় পড়ছে তা তারা ভালোই টের পাচ্ছেন।

অন্যদিকে, যুদ্ধের যে প্রতিরক্ষা ব্যয় সেটাও বেড়ে গেছে হু হু করে। মাত্র এক বছরেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক বার্তা দিয়েছে যে, আগামী বছরের মধ্যে যুদ্ধজনিত ক্ষতি ৬৭ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। লেবাননে ইসরায়েলের চলমান হামলার আগেই এই পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে বাস্তব ক্ষতি এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।

পর্যটনের ওপর অতি নির্ভরশীল পুরোনো জেরুজালেমের অর্থনীতি রীতিমতো ধসে পড়েছে। সেখানে অনেক ফিলিস্তিনির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। নিকট ভবিষ্যতে তারা যে পুনরায় ব্যবসা চালু করবেন, তেমন সম্ভাবনাও নেই।

ইসরায়েলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান শোরেশ ইনস্টিটিউশন ফর সোশিওইকোনমিক রিসার্চের প্রধান ড্যান বেন ডেভিড বলেছেন, ইসরায়েলের অর্থনীতি বড় ধরনের বিপদে আছে। সরকারকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন সরকারের সব মনোযোগ যুদ্ধ নিয়ে। এর অবসানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

তবে অনেকের ভাষ্য, ইসরায়েল অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা যে কেবল গেল বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে, তা নয়। তার আগেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার উদ্যোগ নিলে বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন দেশটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীদের মনেও শঙ্কা তৈরি হয়।

ইসরায়েলের অর্থনীতি এমনিতে যথেষ্ট শক্তিশালী। মূলত প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতের বড় কেন্দ্র হিসেবে সে দেশে বিপুলসংখ্যক স্টার্টআপ কোম্পানির কার্যক্রম আছে। গবেষণা ও উন্নয়নের জগতে ইসরায়েল বড় এক নাম। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে।

এমনিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের শেষ দেখা যাচ্ছে না। এখন তার ওপর হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকেরা শঙ্কিত।

তাদের ভাষ্য, দুটি যুদ্ধের ভার এই অর্থনীতি নিতে পারবে না।

Link copied!