গাজায় ১৫ মাস ধরে চলতে থাকা যুদ্ধ বন্ধে হামাস ও ইসরায়েল একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।ইসরায়েল ও হামাস—বিবদমান দুই পক্ষ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছায় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেছেন। এই চুক্তির আওতায় গাজায় সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তির পথও খুলবে।
এ খবরে যুদ্ধক্লান্ত গাজাবাসী উল্লাসে মেতেছেন। তবে এর মধ্যেও নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।
গাজার আল-আকসা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধবিরতির খবর শোনার পর সেখানকার পরিস্থিতি বদলে যায়। মানুষ উল্লাসে মেতে ওঠেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে পুরো এলাকায় উদ্যাপন চলে। এই দৃশ্যপট সেখানে নিকট অতীতে দেখা যায়নি। কেননা, যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন এবং আহত ব্যক্তিদের যন্ত্রণা আর বিষণ্নতায় এত দিন ভরে ছিল এলাকাটি।
যুদ্ধবিরতির খবরে পুরো গাজা উপত্যকার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁবুগুলোয় জড়ো হয়ে একসঙ্গে যুদ্ধবিরতির খুশির খবর উদ্যাপন করেন। ১৫ মাস ধরে আল-মাওয়াসি এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানেও উল্লাসে মেতে ওঠেন মানুষ।
এর মাঝেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের কাছে কিজান রাশওয়ান এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় ওয়াফা সংবাদমাধ্যমের খবর, সেখানকার একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত দুজন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের বেসামরিক নিরাপত্তা দপ্তর বলছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার আগে বুধবার দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচার বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। আর চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে আল-জাজিরার খবর, এসব হামলায় অন্তত ৮২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় ২৪১ জনকে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায় বন্দী রয়েছেন। হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৬ হাজার ৭০৭ জন।
সংঘাতের এই ১৫ মাসের মধ্যে শুরুর দিকে একবার মাত্র সাত দিনের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এর পর থেকে কয়েক দফায় যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চাপ বাড়তে থাকে। এ লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে জোরালো তৎপরতা শুরু করে কাতার, মিসর আর যুক্তরাষ্ট্র। হামাস ও ইসরায়েলের সঙ্গে শুরু হয় আলোচনা।