ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলের ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করেছে। এরই মধ্যে ইরানে হামলা ‘সম্পূর্ণ’ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক বার্তা সংস্থা আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে হামলা শেষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছে’ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “আমরা ইরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোতে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছি এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক হুমকিগুলোকে ব্যর্থ করে দিয়েছি।”
তিনি হুমকি দেন, ইরান যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েল ‘প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য’ হবে।
এর আগে স্থানীয় সময় ভোররাতে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। একটি ফুটেজে দেখা যায়, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী তেহরানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘তেহরান প্রদেশের আশপাশের আকাশসীমায় প্রতিপক্ষের লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে ধ্বংস করেছে’।
সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, তারা ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) সূত্র জানিয়েছে, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে ইসরায়েল যেকোনো কাজের আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া পাবে।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে।’
ইরানের রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানে বিস্ফোরণের যে শব্দ পাওয়া গেছে, সেগুলো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বলে জানিয়েছেন ইরানি কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে ইরানি কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে এর মধ্যে বেশির ভাগই ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা নয়।’
তারা আরও বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কোথা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে—ইসরায়েল নাকি অন্য কোথাও? কারণ, সাধারণত এই মানের ড্রোনের রেঞ্জ দীর্ঘ হয় না।’
ইরান বলছে, কোনো সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে যথাযথভাবে আঘাত লাগেনি। এমনকি ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্যও নিশ্চিত করেনি দেশটি।
ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়েছে স্থানীয় সময় ভোররাতে। সকালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হামলার মাত্রা, হতাহতের সংখ্যা ও লক্ষ্যবস্তুও আরও স্পষ্ট হবে।
ইসরায়েলি সামরিক হামলার পর ইরানি কর্তৃপক্ষ দেশটির আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। কত সময় এটি বন্ধ থাকবে সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাদের তাদের আকাশসীমা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া, নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ রেখেছেন ইরাকও।
গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ইরানের হামলার কয়েক সপ্তাহ পরে পাল্টা হামলা করলো ইসরায়েল। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের অমানবিক হামলা এবং হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল ইরান।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) সে সময় বলেছিল, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের ‘গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও নিরাপত্তা স্থাপনা।’
এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইরান ‘বড় ভুল করেছে’ এবং ‘এর মাশুল দিতে হবে’।
ইরানও জানিয়েছিল, পাল্টা হামলা হলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।