ইরানের নারীরা যাতে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় পোশাকবিধি মেনে চলে এবং চুল ঢেকে রাখে, তা নিশ্চিত করতে অর্থাৎ হিজাব বিধিগুলো কার্যকর করার জন্য দেশটির রাস্তায় টহলে ফিরছে তথাকথিত নৈতিক পুলিশ। রোববার (১৬ জুলাই) পুলিশের মুখপাত্র জেনারেল সাঈদ মোন্তাজের আলমেহদি এ তথ্য জানিয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সাঈদ মোন্তাজের বলেছেন, ইরানের হিজাব আইন প্রয়োগে রাস্তায় রাস্তায় নৈতিক পুলিশের টহল আবারও শুরু হচ্ছে। যেসব নারী হিজাব পরবে না, তাদের আটক করা হবে। ইরানে নারীদের বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরিধানের আইন রয়েছে। আর এ আইন কার্যকর করতেই পুলিশ মোতায়েনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান।
১০ মাস আগে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনি নামের এক তরুণী নৈতিকতা পুলিশের জিম্মায় মারা যান। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর পুলিশের বিশেষ এ শাখার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনের মুখে একটা সময় হঠাৎ নৈতিকতা পুলিশের সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন থামে এ বছরের শুরুতে। এ সময়ের মধ্যে পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিহত হন। এ ছাড়া বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ হাজারের বেশি জনকে আটক করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে রাজধানী তেহরানে হিজাববিহীন নারীদের সংখ্যা বেড়েছে।
গত ডিসেম্বরে নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। নৈতিকতা পুলিশ টহল বন্ধ করে দিয়ে খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। যদিও এ বাহিনীকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করার খবরটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছিল দেশটির সরকার। বিক্ষোভ চলাকালীন ইরানের সরকার বারবার জানিয়েছিল, হিজাব আইন তুলে নেওয়া হয়নি; এটি সবাইকে মানতে হবে।
ইরানের শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, ইরানে নারীরা ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই তাদের চুল ঢেকে রাখতে হবে এবং লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে, যাতে শারীরিক অবয়ব বোঝা না যায়। নৈতিক পুলিশের মূল কাজ হলো‒সবাই যাতে এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে ও মেনে চলে তা নিশ্চিত করা এবং যারা তা করবে না তাদের আটক করা।
সাঈদ মোন্তাজের বলেন, রাস্তায় টহল দেওয়ার সময় নৈতিক পুলিশের সদস্যরা প্রথমে যেসব নারী পোশাকবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করবে না, তাদের সতর্ক করবেন। এরপরও ওই নারীরা যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়, পুলিশ তখন ‘আইনি পদক্ষেপ’ নিতে পারে।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব হয়। এই বিপ্লবের কয়েক দশক পরও দেশটির ধর্মীয় নেতারা পোশাকসংক্রান্ত নিয়মনীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ইসলামি বিপ্লব নারীদের রক্ষণশীল পোশাক পরার বিষয়টিকে অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে কঠোর হিজাববিধি নিয়ে সেই সময় থেকেই দেশটিতে একটি বিরোধ আছে।