মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে হামাসের সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা দিতে বেশ কয়েকটি কাগজে হাতে লিখে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ইয়াহইয়া সিনওয়ার। হামাসের প্রয়াত এই প্রধান তার লেখায় ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম আল-কুদস সম্প্রতি সিনওয়ারের নিজ হাতে লেখা এমন তিনটি কাগজ পেয়েছে। তার একটিতে লেখা আছে, “তাদের বন্দী করার পর হয় তাদের অনুগ্রহ করে মুক্তি দাও অথবা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দাও”— (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত-৪)। অপর একটি কাগজে একটি হাদিসও লেখা আছে। তাতে বলা হয়েছে, “ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থকে দেখতে যাও এবং বন্দীদের মুক্ত করে দাও।”
হামাসের সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে সিনওয়ার আরও লিখেছিলেন, “যেকোনো কর্তব্য পূরণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন হয়, সেগুলো নিজেই একেকটি কর্তব্য।” হামাসের হাতে থাকা বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে গোষ্ঠীটির প্রয়াত প্রধান লিখেছিলেন, “আমাদের বন্দীদের মুক্তির কর্তব্য তখনই পূর্ণ হয়, যখন শত্রুর বন্দীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়, আর তাদের মুক্তির পুরস্কার মুজাহিদদের জন্য লিপিবদ্ধ হয়।”
সিনওয়ার আল-আরকাম কমার্শিয়াল প্রিন্টিং কোম্পানির ছাপা নোট পেপারে প্রথম যে উইলটি লিখেছিলেন সেটি শুরু করেছিলেন সুরা মুহাম্মদের ৪-নম্বর আয়াত দিয়ে। যেখানে বলা হয়েছে, “তাদের বন্দী করার পর হয় তাদের অনুগ্রহ করে মুক্তি দাও, অথবা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দাও। ব্যাখ্যা অনুসারে এর অর্থ হলো, “যদি শত্রুদের বড় ক্ষতি সাধন করার পর তাদের বন্দী কর, তবে হয় তাদের অনুগ্রহ করে মুক্তি দাও বিনিময়ে কিছু না নিয়ে, অথবা তারা মুক্তিপণ দিয়ে নিজেদের মুক্তি নিশ্চিত করুক।”
সিনওয়ার এই আয়াতের পর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, “রোগীদের দেখতে যাও, ক্ষুধার্তদের খাওয়াও এবং বন্দীদের মুক্ত করো।” এখানে বন্দী বলতে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের বোঝানো হয়েছে।
সিনওয়ার তার উইলে হামাস যোদ্ধাদের উল্লিখিত নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলেন এবং নির্দেশ দিয়ে বলেন, “শত্রুর বন্দীদের জীবনের যত্ন নিতে এবং তাদের নিরাপদ রাখতে। কারণ তাঁরা আমাদের কাছে একটি চাপে রাখার অস্ত্রস্বরূপ।” তিনি এখানে উল্লেখ করেন যে, তিনি এমন একটি নিয়মের ওপর নির্ভর করেন, যা বলে, “যে কাজটি সম্পন্ন না হলে অন্য একটি কাজ সম্পন্ন হয় না, সেটি নিজেই একটি কর্তব্য।” তবে এটি কোনো ধর্মীয় নিয়ম নয় বরং এটি কর্তব্যের পরিচয় তুলে ধরে।
হামাসের প্রয়াত এই প্রধান তার কথা ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব তখনই সম্পন্ন হবে যখন আমরা শত্রুর বন্দীদের রক্ষা করতে পারব এবং বন্দীদের মুক্তির জন্য যে পুরস্কার রয়েছে তা মুজাহিদীনদের পক্ষে লেখা হবে।”