মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দর সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। অনেকের আশঙ্কা, রুপির দরপতন আরও বেশি হতো। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (আরবিআই) হস্তক্ষেপে তা কিছুটা থামানো গেছে।
ভারতীয় রুপির মহাপতনের এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ ডিসেম্বর ভারতে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে ৮৪.৭৪২৫ রুপিতে পৌঁছে যায়। আর এর ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যায়।
এর আগের দিন সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভারতের জিডিপি তথ্য প্রকাশের পর রুপির শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ পতন ঘটে। যা গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে রুপির এই দুর্বলতা আরও বাড়তে পারে।
শীর্ষস্থানীয় মুদ্রা ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কম ও ডলারের চাহিদা অত্যধিক থাকার কারণে এমনটা ঘটেছে। উভয় ক্ষেত্রেই রুপির জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে রুপির এই দুর্বলতা আরও বাড়তে পারে। অর্থনীতিবিদ ধীরাজ নিম মনে করছেন, ভারতের দুর্বল জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং আরবিআইয়ের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পতন রুপির জন্য দুর্বল অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রুপির এই মহাপতনের ঘটনায় মনে করা হচ্ছে, অত্যন্ত খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি। আগে যেখানে পূর্বাভাস ছিল চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হবে, সেখানে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। যা ১৮ মাসের সর্বনিম্ন।
এদিকে, রুপির দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীসহ সবাই পড়েছেন বিপাকে। রুপির ধারাবাহিক দরপতনকে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগজনক বলছেন। সাধারণ গ্রাহকদেরও রুপির দরপতনের খারাপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ধীরাজ নিম বলেন, “ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রুপির অবনমন অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে। বাজারে এখন আরবিআইয়ের কার্যকর পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
যে কারণে মহাপতন
হঠাৎ করেই ভারতীয় রুপির মান সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে পতনের প্রধান কারণ হিসেবে ফরেক্স ট্রেডাররা আঙ্গুল তুলছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্রিকস মুদ্রা নিয়ে করা মন্তব্যের দিকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩০ নভেম্বর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তার আমলে ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে ডলারের পরিবর্তে অন্য কোনো মুদ্রা ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। নইলে তাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ট্রাম্পের মন্তব্য ছাড়াও ইউরোপীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্বল অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সূচক এবং বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের (এফপিআই) প্রবাহে সংকোচন প্রভাব রাখছে ভারতীয় রুপির দরে।