• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুখ ফিরিয়ে রেখেছে ভারত, দুশ্চিন্তায় ‘রহস্যময়’ স্ট্যাটাস তসলিমার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
মুখ ফিরিয়ে রেখেছে ভারত, দুশ্চিন্তায় ‘রহস্যময়’ স্ট্যাটাস তসলিমার
তসলিমা নাসরিন। ফাইল ফটো

দীর্ঘ দুই দশক ধরে ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন বাংলাদেশের আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ভারতে বসবাসের অনুমতির মেয়াদ (রেসিডেন্স পারমিট) প্রায় ৩ মাস আগে শেষ হয়েছে। নতুন করে এখনো তার থাকার মেয়াদ বাড়ায়নি দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে কাজের জন্য অন্য দেশেও যেতে পারছেন না তিনি। এই অবস্থায় তিনি কী করবেন, কী করা উচিত এবং ভারত সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের একটি নিউজ শেয়ার করে দুশ্চিন্তায় ‘রহস্যময়’ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৩২ মিনিটে এই স্ট্যাটাস দেন তসলিমা নাসরিন। তার সেই স্ট্যাটাসটি সংবাদ প্রকাশের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

লজ্জা লেখার পর থেকে নিন্দুকেরা আমাকে ‘বিজেপি’র লোক, ‘আরেসেসের লোক’, ‘র’এর লোক বলে প্রচার করেছে। এও বলেছে আমাকে টাকা দেওয়া হয়েছে ‘লজ্জা’ লেখার জন্য। এরা কখনো ভাবতে পারে না, কেবল মানবাধিকারের জন্য মানুষ সংগ্রাম করতে পারে, কলম ধরতে পারে। টাকা পাওয়া তো দূরের কথা, মানবতার জন্য মানুষ নিজের পকেট থেকে অজস্র  টাকাও খরচ করতে পারে।

নিন্দুকদের মিথ্যের ভিড়ে সত্যিটা হলো, আমি বিজেপি বা আরেসেস বা র’এর কাউকে চিনি না। কারও সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। সরকারের কেউই আমার চেনা নয়। আমি কারও সঙ্গে যে যোগাযোগ করব জানার জন্য যে কেন আমার রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না, তার উপায় নেই। গুগল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ই-মেইল ঠিকানা নিয়ে ই-মেইল করেছি, তার কোনো উত্তর পাইনি।

যে দেশে দীর্ঘদিন ভালোবেসে বাস করছি, নিশ্চিন্তে নিরাপদে বাস করছি, সে দেশ যদি বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে রাখে, তবে একশো একটা দুশ্চিন্তা এসে ভর করে। প্রায় তিন মাস হতে চলল, এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না আমার রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বাড়াবে কি বাড়াবে না, এই ব্যাপারে। কার কী ক্ষতি আমি করেছি? জীবনভর পায়ের তলায় দাঁড়াবার মাটি পেলাম না। যে দেশে জন্মেছিলাম, কিছু সত্য উচ্চারণ করেছি  বলে সে দেশ নির্বাসন দিল, যে রাজ্যে ভাষার টানে আর প্রাণের টানে বাস করছিলাম, সে রাজ্যও অজ্ঞাতনামা কারণে নির্বাসন দিল। আর যে শহরে বাস করছি এখন, অন্য কোনো দেশে বাস করার কোনো উপায় নেই বলে, সে শহরও কি অবশেষে তল্পিতল্পা গুটোতে বলবে? এই শহরের এক ক্রিমিনাল ডাক্তার গত বছর আমাকে নিরীহ পেয়ে ম্যালপ্র্যাক্টিসের শিকার করেছে, সুস্থ শরীরকে টাকার লোভে পঙ্গু করে রেখেছে। দৌড় ঝাঁপ করার, দেশ বদলানোর, নতুন জায়গায় স্থায়ী হওয়ার শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক অবস্থাও আর নেই।

নির্বাসনের শুরু থেকে কম দেশে তো বাস করার চেষ্টা করিনি। এক দেশ থেকে আরেক দেশে শুধু হন্যে হয়ে ‘দেশ’ খুঁজে বেড়িয়েছি। পাইনি। যে দেশকে অনেকগুলো বছর ‘দেশ’ বলে ভেবে নিয়েছি, সে দেশও কি তবে আবার নির্বাসন দিতে চাইছে আমাকে?

বিনা দোষে একজন লেখককে আর কতবার নির্বাসন দণ্ড দেবে ক্ষমতাবান মানুষেরা! এ যেন বার বার ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলার মতো। আমার কি যথেষ্ট মৃত্যু হয়নি?

Link copied!