• ঢাকা
  • রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তিস্তায় বন্যার শঙ্কার মধ্যেই গজলডোবায় পানি ছাড়ল ভারত


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম
তিস্তায় বন্যার শঙ্কার মধ্যেই গজলডোবায় পানি ছাড়ল ভারত
তিস্তা ব্যারেজ। ছবি : সংগৃহীত

কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে দেশের উজানের নদী তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই গত দুই দিনে আন্তঃসীমান্ত নদীর আরও উজানে গজলডোবা বাঁধ ছেড়ে দিয়েছে ভারত। দুই দফায় প্রায় ১১ হাজার কিউমেক পানি ছেড়েছে প্রতিবেশী দেশ। ফলে বন্যার শঙ্কা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, ভারত থেকে এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না। কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, “ভারত যে বাড়তি পানি ছেড়েছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে অফিশিয়াল কোনো খবর নেই।”

মূলত, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তা হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের সিকিম, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দুই দেশের নদীর অংশেই ব্যারেজ বা বাঁধ আছে। ভারতীয় অংশে রয়েছে জলপাইগুড়ির গজলডোবা। আর বাংলাদেশ অংশের তিস্তা ব্যারেজ উত্তরের নীলফামারী জেলায়। এসব বাঁধের ধারনক্ষমতার বেশি পানি হলেই কেবল ছেড়ে দেওয়া হয় বাঁধের গেট।

গজলডোবার তিস্তা বাঁধ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সময় রাত ৮টায় প্রায় ছয় হাজার, রাত সাড়ে ১২টায় আরও একবার চার হাজার ৭০০ কিউমেকেরও বেশি পানি ছাড়া হয়েছে। তবে গজলডোবা দিয়ে হঠাৎ বিপুল পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সেচ দপ্তর বলছে, বাংলাদেশের মতো সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলাতেও তিনদিনে লাগাতার বর্ষণ হচ্ছে।

এতে তিস্তার ভারতের অংশের কয়েকটি এলাকায় পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। যা বাঁধের ধারণক্ষমতার বাইরে। বাড়তি সেই পানি বের করার জন্য এক পর্যায়ে আরও গেট খুলতে হয়েছে। বিবিসির কলকাতা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শুক্রবার কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তার দুই তীরেই লাল সতর্কতা জারি করা হয়। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতেও মেখলিগঞ্জের উজানেলাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

একইসঙ্গে ভারতে তিস্তা অববাহিকায় পানির স্তর বাড়তে থাকায় শুক্রবার রাত থেকে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের জেলা প্রশাসন নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে শুরু করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর বলছে, ২৪ ঘণ্টায় কালিম্পং জেলায় ১৩০ মিলিমিটার ও জলপাইগুড়িতে ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

নীলফামারীর তিস্তা ব্যারেজ। ছবি: সংগৃহীত

তিস্তার ভারতীয় অংশের বিপুল পানি নামবে ভাটির দিকে। ফলে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে তা বড় প্রভাব ফেলবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সরদার উদয় রায়হান জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তাই তিস্তা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। খুব ভয়াবহ কিছু না হলেও তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলা নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দিনে তিস্তায় গড়ে এক মিটার পানি বেড়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার নিচে দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি বাড়তে পারে। অন্যদিকে, রংপুরের অন্যান্য প্রধান নদী- করতোয়া, আত্রাই, টাঙ্গন, পূণর্ভবা, ইছামতি, যমুনা, ঘাঘট ও যমুনেশ্বরীর পানি বেড়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Link copied!