• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য, তবে...


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য, তবে...
কঠোর গোপনীয়তায় দিল্লির কোনো স্থানে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন টানা দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির কোনো এক স্থানে গত ৫ আগস্ট থেকে অবস্থান করছেন তিনি।

এর মধ্যেই গেল এক মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডসহ নির্যাতন,গুম, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, “ভারতে তার (শেখ হাসিনা) অবস্থান নিয়ে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না।”

কারণ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমরা তাকে বিচারের আওতায় আনতে চাই। মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন, যা সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, সাধারণ মানুষ তাকে ভুলে যেত। কিন্তু ভারতে বসে তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন, যা কারোরই পছন্দ হচ্ছে না।”

মূলত, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। গণবিপ্লবের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় অনেকটা বেকায়দায় রয়েছে নয়াদিল্লি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন ড. ইউনূস তাতে শেখ হাসিনাকে ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়াও কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

ভারতে আশ্রয় পাওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে নয়াদিল্লির ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। যে চাপ ভারতকে কূটনৈতিক ধাঁধায় ফেলে দিতে পারে বলে জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাট। একই কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিতে পারে।

তবে দ্য ডিপ্লোম্যাটের ভাষ্য, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারত আইনগত দিক থেকে বাধ্য। বাংলাদেশ-ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয় উল্লেখ করে ডিপ্লোম্যাট বলছে, চুক্তিতে যেসব ধারা রয়েছে সেগুলো অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ভারতের ফেরত দিতে হবে।

অবশ্য, এটাও বলা হচ্ছে যে, চাইলে প্রত্যর্পণ চুক্তির কিছু ধারা দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে অস্বীকৃতিও জানাতে পারে ভারত। কয়েকটি কারণ দেখিয়ে ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত নাও দিতে পারে বলে জানাচ্ছে দ্য ডিপ্লোম্যাট। তবে সেই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সমূহ শঙ্কা থাকবে।

প্রত্যর্পণ চুক্তিতে যা আছে
গত ২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার প্রত্যর্পণ চুক্তি করে। এর তিন বছর পর ২০১৬ সালে চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয় এবং এই অভিযোগে সর্বনিম্ন এক বছর বা তারও বেশি কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাকে ফেরত দিতে হবে।

তবে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাও রয়েছে। ৬ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো দেশ মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে তাহলে তাকে প্রত্যর্পণে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। তবে সেই ধারাতেই আবার বিশেষভাবে উল্লেখ আছে— হত্যা, সন্ত্রাসবাদ ও অপহরণের মতো অপরাধগুলো রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলোর সবই হত্যা, অপহরণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা হয়েছে। দ্য ডিপ্লোম্যাট বলেছে, হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে ধারা ৬ অনুযায়ী ভারত তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে না।

আরেকটি হলো ধারা ৮। এতে বলা আছে, যদি ‘অসৎ নিয়তে’ কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয় তাহলে তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। ভারত এই ধারাটি ব্যবহার করতে পারে। তারা দাবি করতে পারে হাসিনার বিরুদ্ধে সঠিক বিচার করার ‘সৎ নিয়তে’ মামলা করা হয়নি।

শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিলেন সে কারণে ভারত এই ধারা ব্যবহারে সমর্থন পেতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত চাওয়ার পরও যদি ফেরত না দেওয়া হয় তাহলে এটি ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক খারাপ করবে। সূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট।

Link copied!