• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইলিশ না পেয়ে ডিমের যে ‘খোঁটা’ দিল ভারত


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ০৯:৫৩ পিএম
ইলিশ না পেয়ে ডিমের যে ‘খোঁটা’ দিল ভারত

প্রতি বছর দুর্গাপূজা এলেই বাংলাদেশের ইলিশের জন্য মুখিয়ে থাকে ভারত। বাংলাদেশও নিরাশ করে না প্রতিবেশীকে। প্রতি দুর্গাপূজায় অন্তত এক থেকে দেড় হাজার টন ইলিশ পাঠানো হয় ওপারে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন সরকার আসায় হাওয়া বদল ঘটেছে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়ে দিয়েছেন, “এবার দুর্গাপূজা ‍উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো ইলিশ মাছ যাবে না। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে, সেটা হতে পারে না। দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা হবে।”

মৎস ‍উপদেষ্টার এমন ঘোষণার পরেও ভারত হাল ছাড়েনি। সেজন্য ভারতের মাছ আমদানিকারক সমিতি ইলিশ রপ্তানির অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে গত পাঁচ বছর ধরে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সীমিত আকারে ইলিশ রপ্তানি হয়।

চিঠিতে চলতি বছরে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ, গত বছর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৩০০ টন ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ভারতের মাছ আমদানিকারক সমিতির সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, “আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করি বাংলাদেশ নিরাশ করবে না।”

মূলত, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ত্রিপুরা ও আসামেও যায় বাংলাদেশের ইলিশ। সেখানকার মানুষ চড়া দামে হলেও ইলিশ কেনার জন্য মুখিয়ে থাকেন। পদ্মার ইলিশ বিক্রিতে মাছ ব্যবসায়ীদেরও প্রবল আগ্রহ। কারণ মাছটি বিক্রি করে তাদের বেশ ভালোই লাভ হয়।

এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। এমন অনিশ্চয়তার বিষয় বুঝতে পারছেন প্রতিবেশী দেশের সাধারণ মানুষও।

বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। “ইলিশ বন্ধ, তো? ভারত থেকে যাওয়া আড়াই লাখ ডিম পাতে পড়বে বাংলাদেশে!”- এমন শিরোনামে কটাক্ষ করে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন পূজার উপহার হিসেবে আসত পদ্মার ইলিশ। কিন্তু এবার ইউনূস সরকার সেই প্রথা ভেঙে জানিয়ে দিয়েছে, এবার আর বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গে) ইলিশ পাঠনো হবে না। ইলিশ বন্ধ, তো? ভারত থেকে এবার আড়াই লাখ ডিম পাতে পড়ছে বাংলাদেশের!

গুণমানের বিষয়ে ঘটনাচক্রে ভারত থেকে পাঠানো ডিমের ওপর বাংলাদেশকে ‘অন্ধের মতো ভরসা করতে হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ হিসেবে বেনাপোলের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তাদের ডিম পরীক্ষার কোনো যন্ত্রপাতিই নেই। ভারতের চুক্তির ওপর ভিত্তি করে ডিমের ছাড়পত্র দেয়া হবে। খালি চোখে কোনও সমস্য়া দেখা দিলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

বাংলাদেশের ডিম আমদানি নিয়ে কটাক্ষ করেছে পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারও। পত্রিকাটি শিরোনাম করেছে, ‘একটি ডিম কিনতে হতো ১৬ টাকায়! ভারত থেকে গাড়ি বাংলাদেশে যেতেই অর্ধেক দামে ‘মধ্যবিত্তের প্রোটিন’।

আনন্দবাজার লিখেছে, “বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলেও স্থিতিশীল নয় সে দেশের বাজারদর। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মুরগির ডিমের দাম। সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ‘সস্তার প্রোটিন’। বাংলাদেশে একটি ডিম কিনতে হচ্ছিল ১৫-১৬ টাকায়। আড়তদাররা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় যোগান কম বলে এই অবস্থা। তবে ভারত থেকে পড়শি দেশে (বাংলাদেশ) দু’লক্ষ ৩১ হাজার ৪০টি (১৩ হাজার ৯১০ কেজি) মুরগির ডিম রপ্তানি হতেই এক লাফে নামল সেই দাম।’

ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গেল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বন্দর দিয়ে আরও ৪৭ লাখ ডিম আমদানি করা হবে।

Link copied!