পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ‘ধর্মঘটের’ ডাক দিয়েছে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। একইসঙ্গে ইমরানকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাস্তায় নেমে ‘ক্রমবর্ধমান ফ্যাসিবাদের’ প্রতিবাদ করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার (১০ মে) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কোরেশি ইমরান খানের গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর ‘জরুরি কমিটির’ একটি বৈঠক ডাকেন।
বৈঠকে সিনেটর সাইফুল্লাহ খান, আজম স্বাতী, এবং এজাজ চৌধুরী, পাশাপাশি পিটিআইয়ের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব মুরাদ সাইদ, আলী আমিন খান গন্ডাপুর এবং হাসান উপস্থিত ছিলেন। তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
জিও নিউজ জানিয়েছে, পিটিআই কর্মীরা ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, করাচী, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশোয়ার এবং মারদানসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে। করাচীতে, নার্সারির কাছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। তারা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। এছাড়া ইমরান খানের সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডিতে সামরিক ভবনে হামলা চালায়।
বিভিন্ন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেও বিক্ষোভ ঠেকানো যাচ্ছে না। উল্টো লাহোরে সেনানিবাসে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ পিটিআই কর্মী-সমর্থকেরা। এদিকে কোয়েটা থেকে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেট সেবা।
ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।
আর এর জবাবে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সমগ্র পাকিস্তানে ‘শাটডাউন’ বা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সমর্থকদের ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য বুধবার সকালে সোয়াবি শহরে জড়ো হতে বলা হয়েছে বলে দলটি টুইটারে লিখেছে।
পিটিআইয়ের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানের জনগণ এখন আপনাদের সময়। ইমরান খান সব সময় আপনাদের পাশে ছিলেন। এখন সময় তার পাশে দাঁড়ানোর।
এছাড়া বুধবার টুইটারে শেয়ার করা বার্তায়, ইমরানের দলের নেতারা কর্মীদের বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। তবে বিক্ষোভের সময় ‘আইন হাতে তুলে না নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
পাকিস্তানের পুলিশের একজন মুখপাত্র বুধবার রয়টার্সকে বলেছেন, ইমরান খানকে আদালতে আনা হবে না এবং তাকে যে স্থানে হেফাজতে রাখা হয়েছে সেখানে তার নির্ধারিত শুনানি হবে।
এদিকে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, পার্টি চেয়ারম্যান ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে বুধবার সকালে দলটি সুপ্রিমকোর্টে যাবে। ফাওয়াদ চৌধুরী ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে ‘আশ্চর্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
পিটিআই কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তা-তাহির সিকান্দার ও চৌধুরী রিয়াজ আহত হয়েছেন। দুই শহরে মেট্রো বাস পরিষেবাও স্থগিত করা হয়েছে।
কোয়েটায় বিক্ষোভকারী পিটিআই কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে ছয় পুলিশ সদস্যসহ ১২ জনের বেশি আহত ও একজন নিহত হয়েছেন। বালতিস্তানে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরুদ্ধ করে দিয়েছেন, ফরে অসংখ্য যাত্রী পথে আটকা পড়ে।