• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অন্যকে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করিয়ে স্বস্তি পেতেন স্বামী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম
অন্যকে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করিয়ে স্বস্তি পেতেন স্বামী

খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে প্রথমে অচেতন করতেন। এরপর তাকে ধর্ষণ করানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের লোক ডেকে আনতেন স্বামী। এভাবে ১০ বছর ধরে ৯২ বার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্ত্রী। ৭২ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছেন।

অচেতন স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের যৌন সংসর্গ দেখে স্বামী স্বস্তি পেতেন।

এমনই জঘন্য ঘটনা ঘটেছে ফ্রান্সে। নিজের সঙ্গে এই নিগ্রহের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন ভুক্তভোগী বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী নারী জিসেল পেলিকোঁ।

সম্প্রতি ফরাসি পুলিশ এই বিষয়ে তদন্ত করতে শুরু করেছে।

এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর স্তম্ভিত হয়েছে মানুষ। প্রধান এই অভিযুক্তর বয়স ৭১ বছর। নাম ডমিনিক পেলিকো। তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি বিদ্যুৎ কোম্পানির সাবেক কর্মচারী। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেই ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর অ্যাভিগনোনে সোমবার থেকে ডমিনিকের বিচার শুরু হয়েছে।

আদালতে জমা পড়া নথি থেকে জানা যায়, পুলিশের কাছে ডমিনিক এ কথা স্বীকার করেছেন যে, তার অচেতন স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের যৌন সংসর্গ দেখে তিনি স্বস্তি পেতেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

জিসেল পেলিকোঁ আদালতকে জানিয়েছেন, তার স্বামী তাকে অচেতন করে বিগত কয়েক দশক ধরে অর্ধশতাধিক লোককে দিয়ে তাকে ধর্ষণ করিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার স্বামী তাকে ‘ন্যাকড়ার পুতুলের’ মতো ব্যবহার করেছে এবং তাকে ‘পাপের বেদিতে তাকে বলি দিয়েছিল’।

দক্ষিণ ফ্রান্সে এভিনিও শহরের বাসিন্দা জিসেল পেলিকোঁ জানান, তার স্বামী ডমিনিক পেলিকোঁ তার সঙ্গে বিগত কয়েক দশকে প্রায় ১০০ বার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ডমিনিক জিসেলের খাবার বা ওয়াইনের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে আগে অচেতন করত। এরপর লোকজন ডেকে এনে জিসেলকে ধর্ষণ করাতো। এই সময় ডমিনিক নিজে এই ধর্ষণের ঘটনার ছবি তুলত ও ভিডিও করে রাখত। তদন্তকারীরা পরে এসব ভিডিও ও ছবি খুঁজে পায়।

আদালতে জিসেল বলেন, “আমাকে পাপের বেদিতে বলি দেওয়া হয়েছিল...তারা আমাকে ন্যাকড়ার পুতুলের মতো, ময়লার ব্যাগের মতো ব্যবহার করেছে। আমার কোনো পরিচয় বা সত্তাই ছিল না। আমি জানি না, আমি আর কোনো দিন আমাকে ফিরে পাব কি না।” 

জিসেল আরও বলেন, “আমার যা ছিল সব ভেঙে পড়েছে। বর্বরতার, ধর্ষণের এসব দৃশ্য আমাকে শেষ করে দিয়েছে।” 

ফরাসি এই নারী আরও জানান, তার স্বামী এমন এক ব্যক্তিকে দিয়ে তাকে ৬ বার ধর্ষণ করান যে কি না এইডস আক্রান্ত ছিল।” 

তিনি বলেন, “আমার জীবন বিপন্ন ছিল কিন্তু কেউ একটা সেকেন্ডের জন্যও বর্বরতা থামায়নি। আমার এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছিল কারণ একজন লোক ৬ বার এসেছিল (আমাকে ধর্ষণ করতে) যে কি না এইচআইভি পজিটিভ ছিল।”

জিসেল জানান, দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি গ্রামে তাদের বাড়ির কাছে একটি সুপারমার্কেটে একজন নিরাপত্তারক্ষীর হাতে ধরা পড়ার পরে তিনি তার স্বামীর কম্পিউটার তদন্ত করেন এবং পরে ‘পুলিশ আমার জীবন বাঁচায়”। 

সময়টা ছিল ২০২০ সাল। সেবছর সেপ্টেম্বরে, মলে ঢুকে গোপনে নারীদের স্কার্টের নীচের ভিডিও করার সময় ডমিনিক নিরাপত্তারক্ষীর হাতে ধরা পড়েন।

বিবিসি জানায়, স্ত্রী গিজেল পেলিকোকে ধর্ষণ করানোর জন্য অনলাইনে লোক খুঁজতেন ডমিনিক। পরে তাদের বাড়িতে ডেকে আনতেন। পুলিশ বলছে, ৭২ ধর্ষকের মধ্যে ৫১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বয়স ২৬ থেকে ৭৪ বছর বছরের মধ্যে।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এতবার ধর্ষণের শিকার হয়েও গিজেল পেলিকো এতদিন কিছুই জানতে পারেননি। তাকে স্বামী ডমিনিক ট্রানকুইলাইজার দিয়ে এতটাই নেশাগ্রস্ত করে দিতেন যে, দশ বছর ধরে তার সঙ্গে কী ঘটছে তা তিনি বুঝতে পানেনি।

জিসেল তার জীবনে ঘটে যাওয়া এই বর্বরতাকে ‘বিস্ফোরণ’ ও ‘সুনামির’ সঙ্গে তুলনা করেন।

ভুক্তভোগী এই নারী আরও বলেন, “আমার পৃথিবী ভেঙে পড়ছে। আমার সবকিছু ভেঙে পড়ছে; ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি যা কিছু তৈরি করেছিলাম...সত্যি বলতে, এগুলো আমার জন্য ভয়ংকর।”

পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে আদালতকে জানিয়েছে, মামলাটি তদন্ত করার সময় পুলিশ ডমিনিক পেলিকোঁর কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত ইউএসবি ড্রাইভে একটি ফাইল দেখে। সেটি অনুসন্ধান করার সময় কর্মকর্তারা প্রায় ১০০ বার ধর্ষণের শিকার ওই নারীর প্রায় ২০ হাজার ছবি ও ভিডিও খুঁজে পান।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ডমিনিক ঘুমের ওষুধ এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ গুঁড়ো করে স্ত্রীর খাবার বা ওয়াইনে মিশিয়ে দিতেন। তারপরে তিনি একটি অনলাইন চ্যাটরুমের মাধ্যমে পুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ধর্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। ২৬ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ৫০ জন পুরুষের এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।

জিসেলের স্বামী এবং অন্য ১৪ অভিযুক্ত ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। তবে ৩৫ জন পুরুষ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তাদের সঙ্গে যৌনতায় জিসেলের সম্মতি ছিল।

Link copied!