করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পাঁচ বছর পর এবার চীনে হিউম্যান মেটাপনিমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নামে একটি ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ । স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এশিয়ার কয়েকটি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানায়, দেশটির উত্তরাঞ্চলে এইএমপিভি আক্রান্ত রোগী বেশি। সেখানে সব বয়সীরাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিস্থিতিকে জটিল বলা হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা চীনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি।
এই ভাইরাসটি প্রায় দুই দশক ধরে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও এইচএমপিভির জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। ভাইরাসটির বিস্তার রোধ করতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষকে হাত ধোয়ার এবং মাস্ক ও অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ চীনে ছড়িয়ে পড়া এইচএমপিভি ভাইরাসের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। চীনের আশপাশের অঞ্চলগুলো কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হংকংয়ে এ রোগে আক্রান্ত খুব কম রোগী পাওয়া গেছে।
এদিকে, জাপানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। গত শনিবার জাপানে হাজার হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া গেছে।
জাপান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের মতে, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে জাপানের ৫ হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ৯৪ হাজার ২৫৯ জন ফ্লু রোগী ভর্তি হয়েছে।
এইচএমপিভি কী এবং কেন এটি চীনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে?
সিডিসির তথ্যানুসারে, এইচএমপিভি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা ওপরের এবং নীচের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। এটি সব বয়সের ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। তবে শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য ভাইরাসটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
২০০১ সালে প্রথম এইচএমপিভি সনাক্ত করা হয়।
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো কী?
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে, ভাইরাস ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এইচএমপিভির ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা উন্মেষপর্ব সাধারণত তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে হয়। তবে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো বিভিন্ন সময়কালের জন্য স্থায়ী হয়।
কীভাবে ছড়ায়?
এইচএমপিভি অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ছড়ায়। যার মধ্যে রয়েছে-
১. কাশি এবং হাঁচি থেকে নিঃসরণ।
২. হাত মেলানো বা স্পর্শ করা।
৩. সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করা এবং তারপর মুখ, নাক বা চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।