মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায় ভারতে। বিবিসির এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারতে ভুয়া খবর ছড়ানোর পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করে জাতীয়তাবাদ। দেশটির জাতীয় পরিচয়কে বড় করে তুলে ধরার প্রচেষ্টাই ভুয়া খবর বাড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ভারতের সেই ভুয়া খবরের ফাঁদে পড়েছে এখন প্রতিবেশী বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত ভুয়া খবর বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। যা বিপজ্জনক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে টিবিএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কোনো রকম যাচাই বাছাই না করেই বাংলাদেশ নিয়ে ভুল খবর প্রকাশ করছে। ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় আছে হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমও। বিশেষত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এসব ভুয়া খরব প্রচার বেড়ে গেছে উদ্বেগজনক হারে।
টিবিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩০ নভেম্বর ভারতের আগরতলা থেকে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়লে সেই ঘটনাকে ‘হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অপপ্রচার করা হয়। এমনটাই দাবি করছে পুলিশ।
প্রকৃতপক্ষে যাত্রীবাহী বাসটি জরুরিভাবে ব্রেক কষতে গিয়ে সড়কের পাশে থাকা একটি ডেলিভারি ভ্যানকে চাপা দেয়। এতে বাসের কেউ আহতও হয়নি। অথচ ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ক্ষোভ জানিয়ে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও বাসের দুর্ঘটনাকে ‘হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে একটি ভিডিও শেয়ার করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ, আরটি ইন্ডিয়া দাবি করেছিল, প্রতিমা বিসর্জনের সময় মুসলিমরা হিন্দু মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। অথচ ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সেই দাবিটি ভুয়া। তারা জানায়, সেই ভিডিওটি বাংলাদেশেরই নয়, বরং ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ সুলতানপুর গ্রামে প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য।
এর আগে গণহত্যা, দুর্নীতি ও কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলে ইন্ডিয়া টুডে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, বাংলাদেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টা ভুয়া হিসেবে আলোচনায় উঠে এলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সেই প্রতিবেদনের মিথ্যা তথ্য খণ্ডন করা হয়।
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক বাংলাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে ছড়ানো হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার জানায়, বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি। কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এভাবে, প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই শুধু নয়, অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্যে সয়লাব হয়ে গেছে ভারতের মূলধারার জনপ্রিয় সব সংবাদমাধ্যমও। মাইক্রোসফটের জরিপ অনুসারে, ভারতে ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ অনলাইনে ভুয়া খবরের মুখোমুখি হয়েছেন। যেখানে এ হারের বৈশ্বিক গড় ৫৭ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট প্রতারণার শিকার হয়েছেন- যা বৈশ্বিক গড় ৫০ শতাংশের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ৪২ শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, তারা ফিশিং বা স্পুফিংয়ের সম্মুখীন হয়েছেন।
অনেকেই বলছেন, ভুয়া খবর ছড়ানোতে বিশ্বের শীর্ষে থাকা ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যম এবার বাংলাদেশ নিয়ে অসংখ্য ভুয়া খবর প্রচার করছে কোনো যাচাই বাছাই ছাড়াই। যেসব খবরে জাতিগত বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে।