ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্যে দুটি ট্রেন ও একটি মালগাড়ির সংঘর্ষে ২৮৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শনিবার (৩ জুন) ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়াটুডে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। ট্রেনের ভেতর থেকে একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। ভেতরে আটকা পড়েছেন অনেকেই। ট্রেনের দরজা ভেঙে ও গ্যাস কাটারের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। নামানো হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবারের এই দুর্ঘটনাকে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময় একাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলোর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
জুন ১৯৮১: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী একটি ট্রেন বিহারের সহরসার কাছে সেতু পারাপারের সময় লাইনচ্যুত হয়ে বাগমতী নদীতে পড়ে গিয়েছিল ট্রেনটি। এতে প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যু হয় ওই দুর্ঘটনায়। তবে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ২৩৫ বলা হয়েছিল।
জুলাই ১৯৮৮: দক্ষিণ ভারতের কুইলনের কাছে বর্ষা মৌসুমে ফুলে ফেপে ওঠা একটি হ্রদে একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ১০টি বগি পড়ে গিয়ে অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছিল।
আগস্ট ১৯৯৫: উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে দিল্লিগামী পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল কালিন্দী এক্সপ্রেসের। কমপক্ষে ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গরুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর ব্রেক ফেল করেছিল কালিন্দী এক্সপ্রেসের। ওই রেলপথেই আসছিল পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। তার জেরেই সংঘর্ষ ঘটে।
১৯৯৮: সালে কলকাতাগামী জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস লুধিয়ানার খন্নার কাছে লাইনচ্যুত হওয়া গোল্ডেন টেম্পল মেলের লাইনচ্যুত হওয়া বগিতে ধাক্কা মারে। এই দুর্ঘটনায় ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
আগস্ট ১৯৯৯: কলকাতার কাছে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়। পশ্চিমবঙ্গের গইসালের দুর্গম স্টেশনে সংকেত ত্রুটির কারণে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন লোক বহনকারী দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুটি ট্রেনই একই ট্র্যাক ব্যবহার করে চলছিল।
২০০২: হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস গয়া এবং ডেহরি অন শোন স্টেশনের মধ্যে রফিগঞ্জ স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে ১৪০ জনেরও বেশি যাত্রী নিহত হয়েছিল।
অক্টোবর ২০০৫: দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে ভেলুগোন্ডার কাছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৭৭ জন নিহত হয়েছিল।
মে ২০১০: ঝাড়গ্রামের সর্ডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইনচ্যুত হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। সেই সময়ে ডাউন লাইনে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের। এই রেল দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন মারা গিয়েছিলেন।
জুলাই ২০১১: ফতেহপুরে একটি মেইল ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে প্রায় ৭০ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
মে ২০১২: অন্ধপ্রদেশের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হুবলি-বেঙ্গালুরু হাম্পি এক্সপ্রেস। ট্রেনটির চারটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং একটি বগিতে আগুন ধরে যায়। এই ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৪৩ জন।
নভেম্বর ২০১৬: কানপুরের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস। কমপক্ষে ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
জানুয়ারি ২০১৭: দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পরে কমপক্ষে ৪১ জন নিহত হয়েছিল।
অক্টোবর ২০১৮: উত্তর ভারতের অমৃতসরে একটি উৎসবের জন্য জড়ো হওয়া ভিড়ের মধ্য দিয়ে একটি কমিউটার ট্রেন গিয়ে কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছিল।
জানুয়ারি ২০২২: সালের ১৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ময়নাগুড়িতে লাইনচ্যুত হয়েছিল বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।