ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে একটি দ্বিদলীয় প্যানেল গঠনের নিদের্শ দিয়ে ঐতিহাসিক এক রায় দিয়েছেন দেশটির হাইকোর্ট। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দেশটির হাইকোর্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতিকে যুক্ত করে একটি দ্বিদলীয় প্যানেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এখন থেকে গঠিত এই প্যানেলে সংসদের নিম্নকক্ষের বিরোধী দলের নেতা বা সংসদের সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্যের বিরোধী দলকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও দেশটির বিরোধী দলগুলো নিয়মিত এই সংস্থাকে ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে বলে অভিযোগ করেছে। যদিও দেশটির স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম জোসেফ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্তিতে সরকারের দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটেছে।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একাধিক পিটিশনের শুনানির পর আদালতের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ওই আদেশ দিয়েছেন।
রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি কে এম জোসেফ বলেন, “এই বিষয়ে সংসদ কর্তৃক একটি আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন বিধি চালু থাকবে। ভারতের নির্বাচন কমিশনকে কার্যনির্বাহী বিভাগের সকল প্রকার পরাধীনতা আর হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকার কঠিন ও অপ্রতিরোধ্য কাজটি সম্পাদন করতে হবে।”
বর্তমানে ভারতের প্রেসিডেন্ট মূলত সরকারের আদেশ মেনেই কাজ করেন। এবং তিনিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছয় বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন।
হাইকোর্টের নতুন রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন পিটিশনের পক্ষে লড়াই করা আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য একেবারে অপরিহার্য এবং সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য, আপনি এমন একটি ব্যবস্থা রাখতে পারবেন না; যেখানে সরকার একা নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়।”
ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরাইশি বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত দাবি অবশেষে পূরণ হচ্ছে।”