• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
জলবায়ু পরিবর্তন

বিশ্বের এক প্রান্তে দাবদাহ, আরেক প্রান্তে বন্যা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০২:০০ পিএম
বিশ্বের এক প্রান্তে দাবদাহ, আরেক প্রান্তে বন্যা

মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন ও দাবানল দেখা দিচ্ছে এবং দিনে দিনে তা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে বিশ্বের কোথাও কোথাও চলছে ভারী বর্ষণ। দেখা দিয়েছে বন্যা-ভূমিধস। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহের ৭৫ শতাংশ বরফ গলে যাবে। যা বর্তমানে ৬৫ শতাংশ বেশি দ্রুত গলছে। 

রোববার (১৬ জুলাই) সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, পৃথিবীর এক প্রান্তে তীব্র বর্ষণ ও বন্যা, অন্য প্রান্তে তাপদাহ ও দাবানল। প্রতিদিনই এসব দুর্যোগে ঘটছে প্রাণহানি। সারাবিশ্বেই তাপমাত্রা রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষ প্রচণ্ড গরমে হাসফাস করছে। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের তাপমাত্রা সার্বিকভাবে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।

কানাডায় দাবানলে উজাড় হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ গেছে এক তরুণীর। দেশটিতে শত শত মাইলজুড়ে বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। ৯০০ দাবানলের ঘটনার মধ্যে ৫৬০টি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঐতিহাসিক উচ্চ তাপমাত্রার কারণে দেশটির ১৬টি নগরীতে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। এসব শহরের মধ্যে রাজধানী রোম, বলোগনা ও ফ্লোরেন্সও রয়েছে।

গত সোমবার ইতালির রোমের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হতে পারে। পরের দিন মঙ্গলবার তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। এর আগে, ২০০৭ সালে রোমের তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। সিসিলি ও সারডিনা দ্বীপের তাপমাত্রা বেড়ে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। এটি হলে তা হবে ইউরোপের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও পোল্যান্ডও অসহনীয় দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে জর্ডান ও লেবাননে দাবানল জ্বলছে। ইরাকের অসহনীয় গরম পড়ছে। জাপানের পূর্বাঞ্চলে রোববার ও সোমবার তাপমাত্রা হবে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা পূর্বের তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

এরকম এক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশন (এনসিইপি) জানিয়েছে, সোমবার (৩ জুলাই) ইতিহাসে ‘সবচেয়ে গরম’ দিন দেখেছে বিশ্ব। প্রথমবারের মতো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছেছে। যা ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের রেকর্ড ১৬ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিক বন্যায় প্রাণ গেছে অন্তত ২৮ জনের। নিখোঁজ আরও ১০ জন। প্রবল বর্ষণে বন্যা দেখা দিয়েছে চীন, জাপান, ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশে। মৌসুমি বৃষ্টি ও বন্যায় ভারতে ৯০ জন প্রাণ হারিয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজধানী দিল্লিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ৪৫ বছরের মধ্যে যমুনার পানি এভাবে দিল্লি শহরকে ডুবায়নি। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিতে দেশটিতে ইতোমধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাপানের উত্তরাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে আকিতা শহর থেকে ৯ হাজার লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভিয়েতনামেও বন্যা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে বন্যায় অন্তত ৩১ জন মারা গেছে।

এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম শহর জোহানসবার্গে এক দশক পর শুভ্র তুষার পাতের দেখা মিলেছে। সোমবার দেশটির এমপুলাঙ্গা প্রদেশেও তুষারপাত হয়েছে। এত দিন পর এই আবহাওয়া উপভোগ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। দক্ষিণ গোলার্ধের শীতের সময় দ.আফ্রিকার কিছু অংশে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত তুষারপাত হয়। কিন্তু জোহানসবার্গে ২০১২ সালের আগস্টে শেষবার তুষারপাত হয়েছিল।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহের ৭৫ শতাংশ বরফ গলে যাবে। যা বর্তমানে ৬৫ শতাংশ বেশি দ্রুত গলছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ বিপজ্জনক বন্যা এবং পানযোগ্য পানির ঘাটতির সম্মুখীন হবেন।

এতে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত হ্রাস করা না হলে আগামী বছরগুলোতে আকস্মিক বন্যা এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। হিমালয়ের হিমবাহগুলো ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে আগের দশকের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি হারে হারিয়ে গেছে। এভাবে গলতে থাকলে চলতি শতকের মধ্যে হিমবাহগুলোর ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে যাবে।

জাতিসংঘ মে মাসে একটি সতর্কতা জারি করে বলেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম সময়কাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং এল নিনোর সংমিশ্রণে তাপমাত্রা অনেক বাড়বে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই আসন্ন বিপদের মাত্রা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনার একমাত্র উপায় হলো, বিশ্ব অর্থনীতিতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো, বাংলাদেশসহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের যেসব দেশ এই চরম তাপপ্রবাহের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সেসব দেশের বেশিরভাগই খুব গরীব দেশ। অথচ এই বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তারাই সবচেয়ে কম দায়ী।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!