স্পেনের অ্যাথলেট বেয়াত্রিজ ফ্লামিনি মানুষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ কিংবা সংস্পর্শ ছাড়াই ৫০০ দিন কাটিয়ে দেওয়ার পর একটি গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। গুহার মধ্যে দীর্ঘদিন একাকী কাটিয়ে দেওয়ার এই ঘটনা বিশ্ব রেকর্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি যখন গ্রানাডার গুহায় প্রবেশ করেন, সে সময় বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারিতে ধুঁকছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, একটি গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে তিনি ওই গুহায় প্রবেশ করেছিলেন। ফ্লামিনি যে গুহায় ছিলেন, সেটির গভীরতা ২৩০ ফুট। সেখানে প্রবেশের সময় তার বয়স ছিল ৪৮ বছর। এক বছরের বেশি সময় সেখানে কাটিয়েছেন ব্যায়াম করে, ছবি এঁকে ও উলের টুপি বুনে। এ ছাড়া সময় কাটানোর জন্য তাকে দেওয়া হয়েছিল ৬০টি বই। ব্যবহারের জন্য পেয়েছিলেন ১ হাজার লিটার পানি।
গুহা থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি বলেছেন, “আমি এখনো ২০২১ সালের ২১ নভেম্বরে আটকে আছি। আমি বিশ্বের কিছুই জানি না।”
৫০০ দিনের পুরো সময়টা তাকে নজরদারিতে রেখেছিলেন গবেষকেরা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এর মাধ্যমে মানুষের ওপর সামাজিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাব খতিয়ে দেখা। এ ছাড়া একাকী থাকার ফলে সময় সম্পর্কে মানুষের ধারণায় সাময়িক সময়ের জন্য যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়, তা খতিয়ে দেখা। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
স্প্যানিশ টেলিভিশন চ্যানেলের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাসতে হাসতে গুহা থেকে বেরিয়ে আসছেন ফ্লামিনি। গুহা থেকে বেরিয়ে তার দলের সদস্যদের আলিঙ্গন করেন।
এর পরপরই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তার এ অভিজ্ঞতাকে ‘চমৎকার, অপরাজেয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
সাংবাদিকরা আরও বিস্তারিত জানার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে ফ্লামিনি বলেন, “আমি দেড় বছর ধরে কারও সঙ্গে কথা বলিনি। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেছি। আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি। তাই আমাকে আটকে রাখা হচ্ছে। আমি দেড় বছর ধরে পানি স্পর্শ করিনি। আমাকে গোসল করতে দেন। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আপনাদের সঙ্গে দেখা করব।”
পরে আবার সাংবাদিকদের ফ্লামিনি জানান, দুই মাস পর তার সময় গণনা উল্টাপাল্টা হয়ে গিয়েছিল। একসময় তিনি দিন গোনা বন্ধ করে দেন। ফলে গুহা থেকে বের হওয়ার সময় তার মনে হয়েছিল, তিনি সেখানে ১৬০ থেকে ১৭০ দিন ছিলেন।
ফ্লামিনিকে নিয়ে গবেষণা করা দলটি মনে করছে, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় গুহায় কাটিয়ে তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাবেন। তবে আদৌ সেটি হতে যাচ্ছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করেনি গিনেস কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, সবচেয়ে গভীর ভূগর্ভে দীর্ঘ সময় কাটানোর রেকর্ড ছিল চিলি ও বলিভিয়ার ৩৩ খনিশ্রমিকের। ২০১০ সালে চিলিতে তামা-সোনার খনি ধসের পর তারা ২ হাজার ২৫৭ ফুট গভীরে ৬৯ দিন কাটিয়ে দিয়েছিলেন। পরে তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়।