গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের নৃশংস বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের কারণে ভূখণ্ডটিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। সেখানে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই অনাহারে থাকছেন বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন ত্রাণ কর্মকর্তা গাজার অর্ধেক জনসংখ্যা ক্ষুধার্ত রয়েছেন বলে সতর্ক করেছেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ডেপুটি ডিরেক্টর কার্ল স্কাউ বলেন, গাজায় প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম সহায়তা সেখানে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এতে এখানকার ১০ জনের মধ্যে ৯ জন মানুষই প্রতিদিন খেতে পারেন না। চলমান পরিস্থিতির কারণে সেখানে সহায়তা সরবরাহ করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
চলতি সপ্তাহে গাজা সফরের সময় তিনি এবং ডব্লিউএফপি টিম যে ভয়, বিশৃঙ্খলা এবং হতাশার সম্মুখীন হয়েছেন তার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না বলে জানান স্কাউ। সেখানকার গুদামগুলোর বিতরণ কেন্দ্রে বিভ্রান্তি ও হতাশায় নিমজ্জিত হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। স্কাউ-এর মতে, কিছু এলাকায় ১০টির মধ্যে ৯টি পরিবার কোনো খাবার ছাড়াই পুরো দিন এবং রাত কাটাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং সাত দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে গত মাসে গাজা উপত্যকায় কিছু প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু মানুষের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে গাজার দ্বিতীয় সীমান্ত ক্রসিং উন্মুক্ত করা প্রয়োজন বলে জোর দেয় ডব্লিউএফপি।
উপত্যকার দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনিস শহরের পরিস্থিতিও খুবই ভয়াবহ। শহরের একমাত্র অবশিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্র নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি এবং বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আহমেদ মোগরাবি খাবারের অভাব নিয়ে বিবিসির কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমার তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে, সে সবসময় আমার কাছে কিছু মিষ্টি, কিছু আপেল, কিছু ফল চায়। আমি দিতে পারি না। আমি অসহায় বোধ করি। পর্যাপ্ত খাবার নেই, শুধু ভাত আছে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন? আমরা দিনে একবার, মাত্র একবার খাই।”
এদিকে ইসরায়েল জানায়, হামাসকে নির্মূল করতে এবং ইসরায়েলি বন্দিদের ফিরিয়ে আনার জন্য গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যেতে হবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিবিসিকে বলেছেন, “কোনো বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু এবং দুর্ভোগ আমাদের কাছে বেদনাদায়ক। কিন্তু আমাদের কাছে অন্য কোনো বিকল্প নেই। গাজা ভূখণ্ডের ভেতরে যতটা সম্ভব অগ্রগতি অর্জন করতে আমরা সবকিছু করছি।”
সংঘাত শুরুর পর শুধু মিশরের সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে গাজায় সীমিত পরিমাণে সাহায্য পৌঁছানো যাচ্ছে। ইসরায়েল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেখান থেকে গাজায় প্রবেশের কেরাম শালোম ক্রসিং খুলতে সম্মত হয়েছে। তবে তা শুধু সাহায্য লরি পরিদর্শনের জন্য। এরপর ট্রাকগুলো রাফাহ হয়ে গাজায় প্রবেশ করবে।