আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন সম্পর্কিত অন্যতম গোষ্ঠী জি-২০ এর দায়িত্ব পালন করছে ভারত। আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ সম্মেলন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীরকে। তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জি–২০ দেশগুলোর পর্যটন সম্মেলনে যোগ দেবে না চীন ও পাকিস্তান।
সোমবার (২২ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের কারণ কাশ্মীর অঞ্চল। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশ পুরো কাশ্মীর অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। যদিও বর্তমানে এর কিছু অংশ শাসন করছে ভারত এবং কিছু অংশ শাসন করছে পাকিস্তান।
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশ জম্মু–কাশ্মীর দেশটির একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। স্বাধীনতার জন্য বা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার জন্য এ অঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা কয়েক দশক ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এতে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, সৈন্য এবং কাশ্মীরি বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, জি-২০ বৈঠকের সময় সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা এড়াতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দু’টি স্বতন্ত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করেছে ভারত সরকার। তারপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা চলছে।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এ সম্মেলনটি শ্রীনগরের ডাল লেকের তীরে একটি বিস্তীর্ণ এবং সু-সুরক্ষিত স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। জি-২০ সম্মেলনকে সফল করতে আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখছে না প্রশাসন। প্রায় এক হাজার কোটি রুপি খরচ করা হয়েছে শ্রীনগরকে সুসজ্জিত করতে। অতিথিদের স্থানীয় ‘সাইট সিয়িং’ করানো, ডাল লেকে শিকারা-ভ্রমণসহ ইত্যাদি রয়েছে পরিকল্পনায়। মূল অনুষ্ঠান হবে শের-ই-কাশ্মীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি সিআরপিএফ, বিএসএফ, এসএসবি এবং ভারতের দুই সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ও মার্কোস কমান্ডোবাহিনীকেও নামানো হয়েছে। ডাল লেক ঘিরে রেখেছেন মার্কোসরা।
এক হাজার নতুন সিসিটিভি বসানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহানির্দেশক (ডিজি) দিলবাগ সিংহ জানিয়েছেন, দফায় দফায় আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় রয়েছে পুলিশ, রাতেও চলছে টহল।
অভিযোগ উঠেছে টহলের সময় পান থেকে চুন খসলেই ধরপাকড় চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। মেহবুবা মুফতিসহ একাধিক নেতা-নেত্রী অভিযোগ করেছেন, বিনা কারণে বহু কাশ্মীরি যুবককে অন্যায়ভাবে আটক করেছে পুলিশ। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চলছে তল্লাশি, কথায় কথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থানায়। জি-২০ বৈঠক উপলক্ষে অন্তত তিন দিন স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
কাশ্মীরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর, গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে সতর্কবার্তা এসেছে, ভারতের ভাবমূর্তি খারাপ করতে জি-২০ চলাকালীন হামলা হতে পারে কাশ্মীরে। যদিও সরকারিভাবে এই নিয়ে কিছু জানায়নি প্রশাসন। তবে শেষ মুহূর্তে বিদেশি অতিথিদের বেশ কিছু সফরসূচি কাটছাঁট করা হয়েছে।
কাশ্মীরে আয়োজিত জি-২০ এর পর্যটনবিষয়ক বৈঠকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ভারত সরকার। সেটি বাস্তবায়ন করতে কোনো ফাঁক রাখছে না দেশটি।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে এই বৈঠকের ফলে কাশ্মীরের ভাবমূর্তির উন্নতি হবে। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে স্থানীয়ভাবে প্রচার চালিয়েছে প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় পর্যটন সচিব জানিয়েছেন, এই ইভেন্ট জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় পর্যটনের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। জম্মু-কাশ্মীরকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতেই এবার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। এই উদ্যোগ জম্মু-কাশ্মীরকে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেবে।
এদিকে চীন বলেছে, জম্মু–কাশ্মীর বিতর্কিত অঞ্চল। বিতর্কিত অঞ্চলে এ ধরনের কোনো বৈঠকের আয়োজন করা উচিত নয়। সে কারণে তারা এই সম্মেলনের তীব্র বিরোধী।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন শুক্রবার বলেন, চীন ওই সম্মেলনে যোগ দেবে না। এর আগে চীন অরুণাচল প্রদেশের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও যোগ দেয়নি। পাকিস্তানের তীব্র আপত্তির সঙ্গে তারাও সম্মত।
চীন ছাড়াও এই সম্মেলনে সম্ভবত যোগ দেবে না সৌদি আরব ও তুরস্ক। চীনের মতো এই দুই দেশও সম্মেলনের জন্য নাম নিবন্ধন করেনি। এই সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিতদের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করেনি মিশরও।
ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শ্রীনগর সম্মেলনে যোগ দিতে প্রায় ৬০ জন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এ পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করেছেন।