ইউক্রেনে রাশিয়ান সামরিক আগ্রাসনের বিষয়ে কোনো ধরনের ঐক্যমতে পৌছাতে পারেনি জি-টোয়েন্টি জোটের নেতারা। ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুদিনের এই সম্মেলন শেষ হয়েছে। ফলে কদিন আগে বেঙ্গালুরুতে এই গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনের মতো একই পরিস্থিতি হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনেও।
কাতারভিক্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন থেকে নিঃশর্তভাবে সকল সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যৌথ বিবৃতি। কিন্তু রাশিয়া এই বিবৃতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। পাশাপাশি চীনও রাশিয়ার আপত্তিকে সমর্থন জানানোয় কোনো ধরনের সামাধান ছাড়াই শেষ হয় এই সম্মেলন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “প্রত্যেক দেশ ভিন্ন মত পোষণ করেছে। সকলে বিচ্ছিন্ন ছিল তাই এ বিষয়ে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলো বেশিরভার বিষয়ের সঙ্গে একমত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বহুপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, খাদ্য ও শক্তি সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ সমস্যা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ।”
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মুষ্টিমেয় কিছু দেশের একতরফা সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমারি, সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধের মোকাবিলায় বিশ্ব শাসন ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতা দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোকে চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি করে তুলেছে।”
মতপার্থক্য পাশে সরিয়ে রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সামনের দিকে এগোনোর বার্তা দেন মোদি।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম এ সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পরস্পর সাক্ষাৎ করেন। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের ফাঁকে এই সাক্ষাতের ফল সম্পর্কে দুই দেশের কূটনীতিকরা বিশেষ কিছু বলতে চাননি।
যদিও দুই পক্ষের তরফেই সাক্ষাতের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুই পক্ষের এটিই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ। দুজনের সংলাপ হয় ১০ মিনিটের মতো। এ সাক্ষাৎ পূর্বনির্ধারিত ছিল না।
দিল্লি আসার আগে ব্লিঙ্কেনও জানিয়েছিলেন, সাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, সম্মেলনে এসে ব্লিঙ্কেনই ল্যাভরভের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
ভারত এ বছর বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির জোট জি২০-এর সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছে। জোটের শীর্ষ সম্মেলনের আগে ভারতে মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ধারাবাহিক বৈঠক হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জলবায়ু অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়েছে।