কলম্বিয়ার অ্যামাজনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েক মাস পর চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই চার শিশুর মধ্যে ১১ মাস বয়সী এক শিশুও রয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ঘন জঙ্গলের ভেতর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। ওই চার শিশু একে অপরের ভাইবোন। গত ১ মে বিধ্বস্ত হওয়া একটি প্লেনে মায়ের সঙ্গে ছিল তারা। তবে তাদের মা ও প্লেনে থাকা অন্যরা মারা গেছেন।
শনিবার (১০ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট পেট্রো ওই শিশুদের একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে সেনাবাহিনী ও আদিবাসী সম্প্রদায় ৪০ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শিশুদের যত্ন নিতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট জানান, শিশুদের বর্তমানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি শিশুদের দাদার সঙ্গেও কথা বলেছেন। যিনি বলেছেন, বনমাতা শিশুদের সুরক্ষা করেছেন এবং ফিরিয়ে দিয়েছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ পর এই শিশুদের খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি দেশবাসীর জন্য এক আনন্দের বিষয়। এ এক জাদুকরী ক্ষণ। এই শিশুরা একাই ছিল। তাদের এই টিকে থাকার লড়াই ইতিহাস হয়ে থাকবে। এই শিশুরা আজ শান্তির দূত, তারা আজ কলম্বিয়ার সন্তান।
এর আগে গত ১৮ মে আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই শিশুদের খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। সে সময় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর এক টুইট বার্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। টুইটে পেট্রো বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর ‘কঠোর অনুসন্ধান প্রচেষ্টার’ ফলে ওই শিশুদের খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি দেশের জন্য একটি আনন্দের দিন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলে সমালোচনায় পড়েন প্রেসিডেন্ট।
এরপর তিনি টুইটটি সরিয়ে নেন এবং এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে জানান, এই তথ্য কলম্বিয়ার শিশুকল্যাণ সংস্থা থেকে তাকে জানানো হয়েছিল।
কলম্বিয়ার সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছিল, উদ্ধারকারীরা ‘লাঠি ও ডালপালা দিয়ে তৈরি করা একটি আশ্রয়কেন্দ্র’ দেখতে পান। বনের মধ্য শিশুদের বিছানা, পানির বোতল, এক জোড়া কাঁচি, চুল বাঁধার খোপা পাওয়া যায়। এ সময় তাদের পায়ের ছাপও দেখতে পাওয়া যায়। এরপর উদ্ধারকর্মীরা নিশ্চিত হন যে শিশুরা জীবিত আছে। জোরদার করা হয় উদ্ধার অভিযান। তাদের বিশ্বাস ছিল যে সেখানে বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা রয়েছেন।
উদ্ধারকারীরা জানান, চার শিশুর বয়স যথাক্রমে ১৩, ৯, ৪ এবং একজনের বয়স মাত্র ১১ মাস। গত ১ মে দুর্ঘটনার পর থেকে দক্ষিণ ক্যাকুয়েটা প্রদেশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তারা।
এসব শিশু এবং তাদের মা সেসনা-২০৬ প্লেনে ভ্রমণ করছিলেন। প্লেনটি আমাজোনাস প্রদেশের আরাকুয়ারা থেকে সান জোসে দেল গুয়াভিয়ারের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু যাত্রাপথে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে ‘মে ডে সতর্কতা’ জারি করেছিল। এরপর প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান থেকে তিন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
শিশুরা হুইটোটো আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য। বনে ফল গাছের অবস্থান এবং জঙ্গলে টিকে থাকা সম্পর্কে তাদের বিশেষ জ্ঞান রয়েছে। তাই শুরু থেকেই তাদের জীবিত ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে হুইটোটোরা আশাবাদী ছিলেন।
আদিবাসীরাও উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন এবং হেলিকপ্টারগুলো বাচ্চাদের দাদির কাছ থেকে একটি বার্তা পাঠিয়েছে, যা হুইটোটো ভাষায় রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি তাদের চলাচল করতে বারণ করেছেন, যাতে সহজেই অবস্থান শনাক্ত করা যায়।